বাংলা হান্ট ডেস্কঃ চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বাজার থেকে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal Government)। অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই ঋণ নেওয়ার পর চলতি বছরের জন্য বাজারঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকায়। আর বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বছরের শেষে এক বছরের মধ্যে রাজ্যের বাজারঋণ এক লক্ষ কোটি টাকাও ছুঁতে পারে।
রাজ্যের (West Bengal Government) ঋণ নেওয়া কে ‘অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখছে বিজেপি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের (West Bengal Government) এত পরিমান ঋণ নেওয়া ওকে বিরোধী দল বিজেপি ‘অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার ঋণের অর্থ সম্পদ উৎপাদনে ব্যবহার না করে শুধু ভাতা, খেলা-মেলা বা ভোট-সাপেক্ষ খরচে ব্যবহার করছে। বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস বলছেন, “যদি ঋণের অর্থ উৎপাদন সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার না হয়, তা হলে আজকের ঋণ আগামী দিনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। শুধু রোজকার বাজারহাট বা ভাতা দেওয়ার জন্য ঋণ নেওয়া উচিত নয়। সম্পদ সৃষ্টি না হলে ঋণ শোধের পথ সংকীর্ণ হয়ে যাবে।”
শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ
শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করে বলেন, “৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের চাপের মধ্যে রাজ্য টোটো নিবন্ধন থেকে মদ বিক্রির মতো নানা জনবিরোধী উদ্যোগে টাকা তুলতে চাচ্ছে। নির্বাচন সামনে। ভাতা বাড়ানো, দান-খয়রাতি ইত্যাদির কারণে ঋণের ওপর চাপ আরও বাড়ছে।”
অন্যদিকে তৃণমূল দাবি করছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল তহবিল আটকে রাখার কারণে এ ঋণ নেওয়া প্রয়োজন হয়েছে। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, “রাজ্যের হাতে বেশি টাকা থাকলে বেশি ঋণ নেওয়া যায়। রাজ্যের জিডিপির সাথে ঋণের অনুপাত বাড়েনি। তাই এই ঋণকে খুব নেতিবাচকভাবে দেখা ঠিক নয়।”
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের প্রকল্পের কেন্দ্রীয় অনুদান সময়মতো না আসায় রাজ্যকে (West Bengal Government) নিজস্ব অর্থে উদ্যোগ নিতে হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তদুপরি, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পে প্রতি বুথে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে মোট ব্যয় কমপক্ষে ৮,০০০ কোটি টাকা। অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্র আমাদের ন্যায্য পাওনা আটকে রেখেছে। তবুও আমরা ঋণ নিচ্ছি নির্ধারিত সীমার মধ্যে। জনগণের উন্নয়নই অগ্রাধিকার।”
আরও পড়ুনঃ কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও দিতে হবে পরীক্ষা! টেট ইস্যুতে আইনি পথে রাজ্য সরকার
অর্থ দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে বাজারঋণ ধার্য ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নতুন প্রকল্প চালু ও কেন্দ্রীয় অনুদান না-পাওয়ায় রাজ্যের (West Bengal Government) ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ঋণনির্ভরতা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ৬.৩৩ লাখ কোটি, ২০২৪-২৫ সালে ৭ লাখ কোটি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে তা ৮ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।