বাংলা হান্ট ডেস্ক: অরুণাচল প্রদেশকে (Arunachal Pradesh) ঘিরে চিনের (China) পাকামির শেষ নেই। সম্প্রতি, ভারতের (India) ওই রাজ্যের ৩০ টি জায়গার নাম বদলে দেয় চিন। এদিকে, বেজিংয়ের এহেন পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S. Jaishankar)। পাশাপাশি, এই বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও সরকারিভাবে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে, চিনের বিরুদ্ধে কার্যত তোপ দাগা হয়। ওই বিবৃতিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, “চিনের তরফে অরুণাচল প্রদেশের স্থানগুলির নাম পরিবর্তনের ছাইপাঁশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ধরণের প্রচেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। এই উদ্ভাবিত নামকরণের মাধ্যমে কখনোই বাস্তবতাকে বদলানো যাবে না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।”
এদিকে, এর আগে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, “আমি যদি কারোর বাড়ির নাম পরিবর্তন করে দিই, তাহলে কি সেটা আমার হয়ে যাবে?” উল্লেখ্য যে, অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম বদলানোর বিষয়টি চিনের একটি পুরনো কূটনৈতিক চাল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এবার, একইসাথে ৩০ টি স্থানের নতুন নাম প্রকাশ করা হয় চিনের তরফে। এমনিতেই অরুণাচলের প্রসঙ্গে ভারত এবং চিনের মধ্যে চরমে উঠেছে সংঘাত। ভারতের এই রাজ্যের প্রসঙ্গে বিভিন্ন দাবি করলেও চিনকে যোগ্য উত্তর দিয়েছে দিল্লি। ঠিক সেই আবহেই ফের সামনে এল নাম বদলের প্রসঙ্গ।
অরুণাচল নিয়ে কেন হচ্ছে বিতর্ক: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, চিনের তরফে জানানো হয়, ১৯৮৭ সালে, ভারতের অবৈধ দখলে থাকা চিনা ভূখণ্ডে তথাকথিত “অরুণাচল প্রদেশ” গঠন করা হয়। সেই সময় চিন একটি বিবৃতি জারির মাধ্যমে এই বিষয়টির দৃঢ় বিরোধিতা করে। এমনকি, তারা এটাও জানি এসেছিল যে, ভারতের এই পদক্ষেপ বেআইনি এবং তা যেন বাতিল করা হয়। আর এই দাবিকে সামনে রেখেই চিন তার অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত রেখেছে। পাশাপাশি, বেজিং আরও দাবি করেছে যে, চিন-ভারত সীমান্ত কখনওই নির্দিষ্ট করা হয়নি। যেটি পূর্ব সেক্টর, মধ্য সেক্টর, পশ্চিম সেক্টর এবং সিকিম সেক্টরে বিভক্ত রয়েছে। এমতাবস্থায়, চিনের বক্তব্য হল, পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের অরুণাচল প্রদেশের অংশ বরাবরই চিনের এলাকা। এমনকি, ভারতের “অবৈধ দখল”-এর আগে পর্যন্ত ওই এলাকায় চিনের কার্যকরী প্রশাসনিক এক্তিয়ার প্রয়োগ ছিল বলেও দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন: গগনযান মিশনের জন্য তৈরি নয়া হাতিয়ার, ফের চমকে দিল ISRO
এদিকে, অরুণাচল প্রদেশকে “জাংনান” হিসেবে অভিহিত করে চিন। তবে, এবার অরুণাচলের মধ্যে থাকা ৩০ টি স্থানের “স্ট্যান্ডার্ড নাম”-এর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বেজিংয়ের তরফে। উল্লেখ্য যে, চিনের “স্টেট কাউন্সিল” (ক্যাবিনেট) এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে। তবে, যেসমস্ত স্থানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সেইরকম ১১ টি জায়গায় মানুষের বসবাস রয়েছে। এর পাশাপাশি, ১ টি লেক, ৪ টি নদী এবং ১২ টি পাহাড় সহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গার নাম বদল করা হয়।
আরও পড়ুন: উভয়সঙ্কটে শরীফ! পাকিস্তানে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব চিনের, রাজি না হলেই অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত বেজিং
তবে, চিনের নাম বদলের এই পন্থা নতুন কিছু নয়। কয়েকদিন আগেই অরুণাচলকে “দক্ষিণ তিব্বত” হিসেবে বিবেচিত করেছিল চিন। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এহেন বিতর্কের মাঝেই কয়েক সপ্তাহ আগে অরুণাচলে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সবচেয়ে বড় বাঁধের শিলান্যাস করেছিলেন। এর পাশাপাশি, মোদী বিশ্বের দীর্ঘতম টুইন টানেলেরও উদ্বোধন করেন। এমতাবস্থায়, বেজিং অরুণাচলকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করলেও পরে বেজিংয়ের এহেন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে সমর্থন করে পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল আমেরিকাও।