বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পড়শি দেশ নেপাল (Nepal)। ইতিমধ্যেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ইস্তফা দিলেও স্বাভাবিক হয়নি সেখানকার পরিস্থিতি। মূলত, ওই দেশে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার পর প্রতিবাদে Gen Z-রা বিক্ষোভ শুরু করে। তবে, শুধু কী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার জন্যই এই ভয়াবহ বিক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছে নেপাল? না কী নেপথ্যে রয়েছে আরও বড় কারণ? এবার এই প্রসঙ্গেই বাংলাহান্টের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময়ে বিস্তারিত তথ্য জানালেন নেপালের প্রাক্তন সাংসদ জয়রাম যাদব।
বর্তমানে উত্তপ্ত নেপাল (Nepal):
তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, সেখানকার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে নেপালের (Nepal) তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন ছিল। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির বিষয়েও অসন্তুষ্ট ছিল তারা। ঠিক এই আবহেই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকার দেশবাসীর কাছে কোনও মতামত না জানতে চেয়েই আচমকাই সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যার ফলে দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এদিকে, নেপালের জনতা রাজতন্ত্রের শাসন চান কিনা এই প্রশ্নের উত্তরেও জয়রাম প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, “নেপালে (Nepal) ২৫-৩০ বছর আগে রাজতন্ত্রের শাসন ছিল। তারপর জনগণ গনতন্ত্র নিয়ে আসে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকার চালিয়েছে। রাজতন্ত্রের পক্ষে কিছু রাজনৈতিক দল থাকলেও বর্তমানে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে রাজার কোনও দাবি নেই। যুব প্রজন্ম এখন যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তা মূলত ২ টি কারণে ঘটেছে। প্রথমত দুর্নীতি এবং দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা।”
এছাড়াও, নেপালের (Nepal) পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বালেন্দ্র শাহের নাম উঠে আসার প্রসঙ্গে জয়রাম বলেন দেশের নবীন প্রজন্মের কাছে বালেন্দ্র জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি “ইউথ আইকন”। বালেন্দ্র দায়িত্ব নিলে তিনি ভালো করবেন বলেই অনুমান তরুণ-তরুণীদের। এমতাবস্থায়, নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে বালেন্দ্র শাহের নামই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
এদিকে, সরকারের দুর্নীতির প্রসঙ্গে জয়রাম জানান যে, বর্তমানে নেপালের (Nepal) সবথেকে পুরনো রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট দল সম্মিলিতভাবে সংবিধান সংশোধন করার নামে সরকার তৈরি করে। এই দুই দলের সরকার জনগণের ওপর নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেয়। বিভিন্ন ঘটনায় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা সমালোচনা তৈরি করেছে। যার ফলে এই দুই রাজনৈতিক দলের একাধিক ভুল বর্তমান বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন: একলাফে দ্বিগুণ হবে বাণিজ্য! অক্টোবরেই এই দেশের সঙ্গে ট্রেড ডিলের সম্ভাবনা ভারতের
এর পাশাপাশি নেপালকে (Nepal) হিন্দুরাষ্ট্রের পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত করার প্রসঙ্গেও জয়রাম জানান, নেপালকে হিন্দুরাষ্ট্র করা হোক এমন দাবিও নেপালের জনগণের একাংশের রয়েছে। এছাড়াও, বর্তমানে নেপালে আন্দোলনের আবহে ভারতের সাহায্য তাঁরা চাইছেন কী না এই বিষয়ে জয়রাম বলেন, ভারতের সঙ্গে নেপালের দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশেই অধিকাংশ মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন। নেপাল একটি বহুভাষিক দেশ। তাঁর মতে, “নেপালে বিপুল সনাতন হিন্দু ধর্মীরা বসবাস করেন। ভারতীয়রা মুক্তিনাথ-পশুপতিনাথে আসেন, আমরাও বদ্রীনাথ-কেদারনাথে যাই। নেপালের সঙ্গে ভারতের শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক নয়; বরং আর্থিক, সাংস্কৃতিক, ধার্মিক রাজনীতি রয়েছে। দুই দেশের নেতৃত্বদের এই বিষয়গুলি বুঝতে হবে। আমরা চাই নেপাল এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট থাকুক।”