পিছু ছাড়ছে না বিবাদ এবং বিতর্ক! “রতন” হীন ১ বছরে কতটা পরিবর্তন টাটা গ্রুপে?

Published on:

Published on:

What is the situation of Tata Group 1 year after Ratan Tata death?

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আজ (৯ অক্টোবর, ২০২৫) টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটার (Ratan Tata) প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনেই প্রয়াত হয়েছিলেন বর্ষীয়ান ধনকুবের। তাঁর মৃত্যুর পরেও, রতন টাটাকে এমন একজন নেতৃত্ব হিসেবে স্মরণ করা হয় যাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং নীতি ভারতীয় ব্যবসা এবং সমাজসেবা উভয়কেই সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু, রতন টাটার প্রয়াণের পরেই তাঁর নেতৃত্বাধীন বৃহৎ গোষ্ঠী টাটা ট্রাস্ট অন্তর্দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়েছে।

রতন টাটার (Ratan Tata) প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী:

টাটা ছিলেন একজন সরল মানবিকতার পরিচায়ক: রতন টাটা (Ratan Tata) সহজসরল অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি ছিলেন অত্যন্ত মিশুকে। তাঁকে প্রায়শই কোলাবায় ঘুরে বেড়াতে, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, অথবা নীরবে সামাজিক কাজে সাহায্য করতে দেখা যেত। এটাই ছিল তাঁর নেতৃত্বের ধরণ।রতন টাটা তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা এবং আন্তরিক মানবতা উভয়ই প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে টাটা গ্রুপে যোগদান করেন। কয়েক দশক ধরে, তিনি এই বৃহৎ গ্রুপের নেতৃত্বে আসেন এবং ১৯৯১ সালে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হন।

What is the situation of Tata Group 1 year after Ratan Tata death?

বিগত এক বছরে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন টাটা গ্রুপ: উল্লেখ্য যে, রতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যুর এক বছর হয়ে গেল। এই এক বছরে টাটা গ্রুপের মধ্যে অসংখ্য বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রতন টাটার মৃত্যুর পর, তাঁর ভাই নোয়েল টাটার নেতৃত্বে টাটা ট্রাস্টগুলি বোর্ড নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে ট্রাস্টিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে আছে। নোয়েল টাটার সঙ্গে যুক্ত একটি গোষ্ঠী এবং ৪ জন ট্রাস্টির একটি গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই দ্বিতীয় অংশটির নেতৃত্বে আছেন মেহলি মিস্ত্রি। যিনি শাপুরজি পালোনজি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের টাটা সন্সে ১৮.৩৭ শতাংশের অংশীদারিত্ব রয়েছে।

বোর্ড সদস্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বিরোধটি আবর্তিত হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে রতন টাটার (Ratan Tata) মৃত্যুর পর, টাটা ট্রাস্ট একটি নতুন নীতি চালু করে। যেখানে ৭৫ বছর বয়সে পৌঁছনো নমিনি ডাইরেক্টরদের বার্ষিক টাটা সন্সের বোর্ডে পুনর্নিযুক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর, বিজয় সিং নিজেই টাটা সন্সের বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন: দিতে হবে ৫ কোটি টাকা! রিঙ্কু সিংকে হুমকি দাউদ গ্যাংয়ের

বিরোধ চরমে পৌঁছয়: ট্রাস্ট এবং শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের মধ্যে আরেকটি বড় বিরোধ হল টাটা সন্সকে একটি আপার লেয়ার কোর ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (CIC) হিসাবে তালিকাভুক্ত করা নিয়ে। এসপি গ্রুপের ঋণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরের শুরুতে, তারা প্রায় ২০ শতাংশ সুদের হারে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার ঋণ রিফাইন্যান্স করেছে। এমতাবস্থায়, যদি গ্রুপের অংশীদারিত্ব আংশিকভাবে টাটা ট্রাস্ট এবং টাটা সন্স কিনে নেয়, তাহলে ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে।

এদিকে, আগামী ১০ অক্টোবর টাটা ট্রাস্টের পরবর্তী বোর্ড মিটিং সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। অনুমান করা যাচ্ছে যে, ২ টি বিবাদমান গোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গোষ্ঠীর ট্রাস্টিদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের সাহায্য নিতে হয়েছিল। গত মঙ্গলবার ট্রাস্টিদের সঙ্গে এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উভয় গোষ্ঠীকে “টাটার পদ্ধতিতে” কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ টাটা সন্সের কার্যকারিতার ওপর কোনও প্রতিকূল প্রভাব না ফেলে।

আরও পড়ুন: হয়ে যান সাবধান! ৪০ কোটি Windows ব্যবহারকারীর জন্য সামনে এল বড় সতর্কতা

কতটা প্রভাব পড়বে: রিপোর্ট অনুসারে, এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ১৮০ বিলিয়ন ডলারের এই বিশাল কোম্পানির কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গ্রুপটির উত্তরাধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি এটাই দেখায় যে ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতেও কর্পোরেট গভর্নেন্স কতটা ভঙ্গুর হতে পারে।

টাটার ঐতিহ্য: ২০০৮ সালের পদ্মবিভূষণ পুরষ্কারপ্রাপ্ত রতন টাটা (Ratan Tata) সর্বদা তাঁর সাফল্যের জন্য টাটা গ্রুপকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। কোম্পানির বাইরেও, তিনি তাঁর মহান মনসিকতার মাধ্যমে সমাজসেবা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়নের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। তিনি মুম্বাইতে ক্যান্সার চিকিৎসার হাসপাতাল এবং ছোট প্রাণীদের জন্য ভারতের বৃহত্তম টার্সিয়ারি কেয়ার সেন্টার তৈরি করেছিলেন।