বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত বুধবার অর্থাৎ ২৩ অগাস্ট বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan 3)-এর সফল অবতরণ করেছে ভারত (India)। আর এর মাধ্যমেই ইতিহাস তৈরি করে চাঁদের দুর্গম অঞ্চলের মাটি ছুঁয়ে ফেলেছেন ISRO (Indian Space Research Organisation)-র বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি, তাঁদের অনুমান, ওই এলাকায় হিমায়িত জলের উপস্থিতি থাকতে পারে।
ল্যান্ডার “বিক্রম” থেকে বেরিয়ে আসে রোভার “প্রজ্ঞান”: ইতিমধ্যেই ISRO-র সাথে যুক্ত থাকা সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, ল্যান্ডার “বিক্রম” থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার “প্রজ্ঞান”। যেটি এখন চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়াবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু “বিক্রম” ল্যান্ডার থেকে রোভারের সফলভাবে বেরিয়ে আসার ঘটনায় ISRO-র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমতাবস্থায়, এই যন্ত্র ১৪ দিন ধরে সক্রিয় থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু, তারপরে কি ঘটবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার “বিক্রম” এবং রোভার “প্রজ্ঞান” সৌরশক্তি দ্বারা চালিত হবে। এদিকে, চাঁদে সূর্যের আলো ১৪ দিন ধরে থাকে। যেটিকে এক চন্দ্র দিন বলা হয়। এমতাবস্থায়, সূর্যের আলো যতক্ষণ চাঁদে থাকবে ততক্ষণ রোভার এবং ল্যান্ডার তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। চাঁদে সূর্যালোকের নতুন চক্র ২৩ অগাস্ট শুরু হয়েছিল। তাই ISRO এই দিনটিকে সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, আগামী ১৪ দিন সূর্যের আলো থাকবে। কিন্তু ১৪ দিনের পরের ১৪ দিন সূর্য অস্ত যাবে চাঁদে। সেই সময়ে, চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। যার কারণে সেখানে কোনো সরঞ্জাম কাজ করার মতো পরিস্থিতিতে থাকবে না।
আরও পড়ুন: চাঁদে পা রাখতে না রাখতেই লক্ষ্য সূর্য! কবে যাত্রা করবে আদিত্য L1? দিনক্ষণ জানালেন ISRO প্রধান
পরেও কাজ চালিয়ে যেতে পারে: তবে, ISRO-র আধিকারিকরা ল্যান্ডার “বিক্রম” এবং রোভার প্রজ্ঞানের পরের চন্দ্র দিনের ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। ISRO-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথের মতে, যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকবে, ততক্ষণ সমস্ত সিস্টেমের শক্তি থাকবে। তিনি বলেন, “সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাবে। তাপমাত্রা নেমে যাবে মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাই সিস্টেমের টিকে থাকা সম্ভব নয়। যদি এটি তারপরেও সক্রিয় থাকে, তাহলে আমাদের খুশি হওয়া উচিত এবং আমরা আবার সিস্টেমে কাজ করতে পারব। আমরা আশা করি এটি হবে।” তবে চন্দ্রযান-৩-র কোনো অংশই পৃথিবীতে ফিরে আসবে না।
আরও পড়ুন: তিন মাস ধরে বেতন না পেয়েই চন্দ্রযান-৩ মিশন সম্পন্ন করেন ISRO-র বিজ্ঞানীরা? সামনে এল আসল সত্য
চাঁদে কি করবে “প্রজ্ঞান”: উল্লেখ্য যে, এই সময় রোভারটি চাঁদের পৃষ্ঠে বিচরণ করবে এবং সেখানে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করবে। ল্যান্ডার এবং রোভার বৈজ্ঞানিক পেলোড বহন করছে। যা চন্দ্রপৃষ্ঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। রাসায়নিক গঠনের তথ্য পেতে রোভারটি তার পেলোড “APXS” (আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার) দিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠকে স্টাডি করবে এবং চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে খনিজ গঠনেরও সন্ধান করবে। এছাড়া, “প্রজ্ঞান”-এর পেলোড “লেজার ইন্ডুসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ” (LIBS) চাঁদের মাটি এবং পাথরের মৌলিক গঠনকে সনাক্ত করবে বলে জানা গিয়েছে।