বাংলায় সর্বপ্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন কে? ৯৯ শতাংশ ব্যক্তি জানেন না এই উত্তর

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাঙালির কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হল দুর্গাপুজো (Durga Puja)। প্রতিবছর মহাসমারোহে এই পুজোয় মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি। পাশাপাশি, পুজোর এই কটা দিনের জন্য সারাবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। এমতাবস্থায়, এই পুজো স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। ইউনেস্কোর (UNESCO) হেরিটেজ লিস্টে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে সবার প্রিয় দুর্গাপুজো। তবে, বর্তমানে এই পুজো সর্বত্রই ব্যাপক আকার ধারণ করলেও বাংলার প্রথম দুর্গাপুজোর ইতিহাস কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করছি।

পুরাণ মতে, বলিপুরের (যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর শহর) রাজা সুরথ বাংলাতে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। মূলত, সুপুর ছিল রাজা সুরথের রাজধানী‌‌। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, মর্ত্যলোকের এই রাজাই মর্ত্যবাসীদের মধ্যে দেবীর দুর্গার লীলা প্রচার করেছিলেন। পাশাপাশি, মার্কন্ডেয় পুরাণেও এই প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে:
তত: স্বপুরমায়াতো নিজেদেশাধিপোহভবৎ।
আক্রান্ত: স মহাভাগস্তৈস্তদা প্রবলারিভি:॥৭
অমাতৈ:বলিভি:দুষ্টে:দুর্বলস্য দুরাত্মভি:।
কোষ বলঞ্চাপহৃতং তাত্রাপি স্বপুরে তত:॥৮

Who introduced Durga Puja first in Bengal

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, দুর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্ত বংশীয় রাজা অর্থাৎ চিত্রগুপ্তের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটা সময়ে তিনি তাঁর রাজত্ব, সম্পত্তি এবং মর্যাদা সবকিছুই হারিয়ে ফেলেন। যার ফলে যদুবংশীয় এই রাজা তাঁর রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হন। এদিকে, রাজ্য ছাড়ার পর তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয় আরও এক হতভাগ্য বণিকের। ওই বণিকও ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, তাঁদের সাথে যোগাযোগ হয় মেধস মুনির।

আরও পড়ুন: দেশের পরিবহণ ব্যবস্থায় নয়া পালক! RapidX পরিষেবার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

মনে করা হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শহরের কাছে গড়চন্ডীধাম নামক স্থানে ছিল মেধস মুনির আশ্রম‌। যদিও, অনেকে আবার মনে করেন যে, মেধস মুনির আশ্রম বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার করলডাঙা পাহাড়ে অবস্থিত ছিল। তবে, আশ্রমের অবস্থান নিয়ে দ্বিমত থাকলেও এই মেধস মুনির আশ্রমেই যে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল এই প্রসঙ্গে সকলেই সহমত পোষণ করেছেন।

আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনায় বিপুল শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের জন্য জারি হল বিজ্ঞপ্তি! এইভাবে করুন আবেদন

তাঁরা মেধস মুনির শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের করুণ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। এমতাবস্থায়, মুনি তাঁদের দেবীর মাহাত্ম্য শোনানোর পাশাপাশি মহিষাসুরমর্দিনীর স্তব করে শোনান। এছাড়াও, তিনি রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি বৈশ্যকে জানান মা দুর্গার আরাধনা এবং পুজো করলেই তাঁদের ভাগ্য ফিরবে। ওই নির্দেশ মতো তাঁরা মাটির প্রতিমা নির্মাণ করে ওই আশ্রমেই দুর্গাপুজো শুরু করেন। কথিত আছে, দেবীর আরাধনার পর রাজা সুরথ ও বণিক সমাধি বৈশ্য ফের তাঁদের মর্যাদা পুনরায় ফিরে পান। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, মেধস মুনির আশ্রমে এই পুজো বসন্তকালে সম্পন্ন হয়েছিল। অপরদিকে, শরৎকালের দুর্গাপুজো শ্রী রামচন্দ্রের অকাল বোধনের কারণে সম্পন্ন হয়।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর