বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালে (Nepal) রাজনৈতিক অস্থিরতা একদিনের মধ্যেই চরমে পৌঁছেছে। টানা বিক্ষোভ এবং ছাত্র-যুব সমাজের চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি (KP Sharma Oli)। কয়েক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল, শেষ পর্যন্ত ওলি এই সরকার ধরে রাখতে পারবে কিনা? সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকার পরিষ্কার জানিয়েছিল, ওলি পদত্যাগ করবেন না। কিন্তু ক্রমাগত বিক্ষোভের ঢেউ এবং জনগণের ক্ষোভকে আর সামলাতে না পেরে অবশেষে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন।
নতুন নেপালের দায়িত্ব কার হাতে? (Nepal)
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরও নেপালের (Nepal) পরিস্থিতি শান্ত হয়নি, বরং আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা এখন অন্তর্বর্তীকালীন নতুন নেতৃত্ব দাবি করছেন। তাঁদের একাংশ সরাসরি কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তুলেছেন। আন্দোলনকারীদের মতে, শাহই বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে যোগ্য নেতা। তিনি জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এবং রাজনৈতিক দলের বাইরের একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি।
আরও পড়ুন:- জ্বলছে নেপাল! বাংলায় প্রশাসনিক কড়াকড়ি, শিলিগুড়ি-কাঠমাণ্ডু বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত
প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগ ঘোষণার পরপরই কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রপতি ভবন এবং ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনের আশেপাশে আগুন ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। বহু জায়গায় সেনা মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও আন্দোলন দমনে নামলেও, বেশ কয়েকটি স্থানে প্রতিবাদকারীরা সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। নেপাল (Nepal) সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ ভেঙে পড়ছে বলে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে সম্ভাব্য নেতৃত্ব হিসেবে উঠে আসা বালেন শাহের (Balen Shah) জনপ্রিয়তা নেপালে (Nepal) এখন তুঙ্গে। তিনি শুধু একজন স্বাধীন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং গায়ক, র্যাপার, কবি এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও পরিচিত। ১৯৯০ সালের ২৭ এপ্রিল কাঠমান্ডুতে জন্ম নেওয়া শাহ মৈথিল-মধেশি পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষে তিনি নগর ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় হন এবং ২০২২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচিত হন।
নেপালের (Nepal) কাঠমাণ্ডুর মেয়র হিসেবে শাহ স্বচ্ছ প্রশাসন ও আধুনিক নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। নগর পরিষদের বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করা থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি এবং অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। যদিও নদীতীরবর্তী দখল উচ্ছেদ ও ফেডারেল সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মতো কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, তবুও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি একজন সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।
রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা এবং বারবারের অচলাবস্থার মধ্যে বালেন শাহকে নতুন নেতা হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকেই। তাঁর সততা ও স্বচ্ছতার ভাবমূর্তি তাঁকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। আজ নেপাল জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটাই—বালেন শাহ কি সত্যিই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন? তিনি কি নেপালের (Nepal) রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নতুন দিশারি হয়ে উঠবেন?
যদিও পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত, তবে ওলির পদত্যাগের পর বিক্ষোভকারীদের দাবির কেন্দ্রে উঠে আসা বালেন শাহ এখন নেপালের (Nepal) অস্থির রাজনীতির সম্ভাব্য নতুন মুখ হয়ে উঠেছেন।