বাংলহান্ট ডেস্ক:- গণবিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে নেপাল (Nepal)। শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের গণঅভ্যুত্থান কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’— দুই দেশেই রাষ্ট্রপ্রধানের পতনের ইতিহাস সাক্ষী ছিল বিশ্ব। এবার একই চিত্র দেখা গেল নেপালে। টানা ছাত্র-যুব আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৈডালের বাসভবনে প্রবল তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা। শুধু রাষ্ট্রপতির বাড়ি নয়, একে একে অধিকাংশ মন্ত্রীর বাসভবনেও হামলা হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে ইতিমধ্যে প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। সেনাপ্রধানের চাপেই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে অবশেষে পদত্যাগ করতে হয়। ফলে নেপাল কার্যত নতুন রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি।
নেপালে গণবিদ্রোহের মুখ গুরুং (Nepal)
নেপালের (Nepal) একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই ছাত্র-যুব বিদ্রোহের নেপথ্যে রয়েছেন ৩৬ বছরের এক তরুণ রক্ত—সুদান গুরুং (Sudan Gurung) । তাঁর নাম এখন নেপালের প্রতিটি বিক্ষোভ মিছিলে উচ্চারিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে নেপালে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল, তখনই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হামি নেপাল’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই বিপর্যয়ে নিজের সন্তানকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেন তিনি। তারপর থেকেই প্রান্তিক অঞ্চলে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ হাতে নেন। মূলত ছাত্র-যুবদের নিয়ে গড়া এই সংগঠন দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনেও তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিশেষত বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তাঁর ভূমিকা আলোচিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষের মুখে, পুননর্বীকরণ হবে? হাই ভোল্টেজ বৈঠকে নয়াদিল্লি-ঢাকা
সাম্প্রতিক সময়ে নেপাল (Nepal) সরকারের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ তীব্রতর হচ্ছিলই। এরই মধ্যে সুদান গুরুং নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক দেন। তাঁর আহ্বান ছিল— পড়ুয়ারা স্কুল ইউনিফর্ম পরে হাতে বই নিয়ে মিছিলে নামবেন। এই প্রতীকী বার্তাই ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। কিন্তু আন্দোলনের মাঝেই কেপি ওলি সরকার একযোগে ২৬টি জনপ্রিয় সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা করে। জনমতের কণ্ঠরোধের এই পদক্ষেপেই ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়।
সরকার ভেবেছিল কঠোরতা দেখিয়ে বিক্ষোভ দমন করা যাবে। কিন্তু তা ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নামে হাজার হাজার ছাত্র-যুব। দ্রুত এই আন্দোলন রূপ নেয় বিপ্লবী জোয়ারে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বহু হতাহত হয়। তবুও আন্দোলন থেমে থাকেনি। অবশেষে চাপে পড়েই প্রধানমন্ত্রী ওলিকে পদত্যাগ করতে হয়।
আরও পড়ুন: উত্তপ্ত নেপাল, ১৯ জন তরুণের প্রাণের বিনিময়ে শেষমেশ সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ওলি সরকারের
আজ নেপালজুড়ে (Nepal) আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন সুদান গুরুং। একজন স্বেচ্ছাসেবী ও দুর্নীতিবিরোধী কর্মী থেকে তিনি এখন দেশের তরুণদের ‘নতুন নায়ক’। অনেকেই মনে করছেন, নেপালের এই নবজাগরণের পেছনে তাঁর নেতৃত্বই মূল চালিকা শক্তি। এখন প্রশ্ন একটাই— সুদান গুরুং কি সত্যিই নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বে উঠে আসবেন? সময়ই তার উত্তর দেবে।