বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতে যখন কেউ নিজের বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখে, তখন প্রথমেই মনে আসে ‘হোম লোন’(Home Loan)-এর কথা। আজ প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্ক আকর্ষণীয় সুদের হারে সহজ কিস্তিতে গৃহঋণ দিচ্ছে। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, এই প্রথার সূচনা কবে হয়েছিল? একসময় কিন্তু ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ‘হোম লোন’ নামে কোনও ধারণাই ছিল না।
ভারতে হোম লোন (Home Loan) শুরুর ইতিহাস:
ভারতের ব্যাঙ্কিং ইতিহাস বহু প্রাচীন। ১৯৩৫ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এক কেন্দ্রীভূত কাঠামো আসে। পরে ১৯৬৯ এবং ১৯৮০ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছায়। কিন্তু তবুও ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলির নজর ছিল মূলত শিল্প ও ব্যবসায়িক ঋণের দিকে। সাধারণ মানুষের বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ (Home Loan) দেওয়ার কোনও সংগঠিত কাঠামো তখনও গড়ে ওঠেনি। সেই সময়েই এক বেসরকারি সংস্থা বাজারে সম্ভাবনা দেখেছিল— সেই সংস্থাই ছিল এইচডিএফসি (HDFC – Housing Development Finance Corporation)।
আরও পড়ুন: আটকে ছিল কাটা পা! দিল্লি বিস্ফোরণে i20 গাড়িটি চালাচ্ছিল উমর উন-নবিই, DNA পরীক্ষায় হল প্রমাণ
১৯৭৮ সালে ভারতের ইতিহাসে প্রথম সংগঠিতভাবে হোম লোন (Home Loan) নিয়েছিলেন ডি. বি. রেমেডিওস নামের এক ব্যক্তি। মুম্বইয়ের মালাড এলাকায় তিনি নিজের বাড়ি তৈরি করছিলেন, যার মোট খরচ ছিল প্রায় ৭০,০০০ টাকা। এইচডিএফসি তাঁকে ৩০,০০০ টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছিল। আজকের দিনে যেখানে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়, তখন বাড়ির খরচের অর্ধেকেরও কম ঋণ পাওয়া যেত। এই ঋণের সুদের হার ছিল স্থায়ী— ১০.৫ শতাংশ। এই ৩০,০০০ টাকার ঋণ ছিল শুধু এক আর্থিক লেনদেন নয়, ভারতের হাউসিং ফাইন্যান্স খাতের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর। তবে এই বাজার গতি পেতে অনেক সময় নেয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত হোম লোনের সুদের হার ছিল ১১ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। সেই সময় ঋণগ্রহীতাদের গড় বয়স ছিল প্রায় ৪২ বছর এবং গড় ঋণের অঙ্ক ছিল মাত্র ৩৯,০০০ টাকা।
ভারতের হোম লোন (Home Loan) বাজারে বড় পরিবর্তন আসে যখন ভারতীয় স্টেট ব্যাংক (SBI) এই খাতে প্রবেশ করে। এসবিআই “টিজার রেট” বা প্রাথমিকভাবে কম সুদের ধারণা চালু করে— কয়েক বছর কম সুদের পর, পরবর্তী সময়ে সেই হার বৃদ্ধি পেত। ব্যাঙ্কের বিশাল CASA (Current Account-Savings Account) ভিত্তির কারণে তাদের তহবিলের খরচ কম ছিল, ফলে তারা সহজেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারত। অন্য ব্যাঙ্কগুলি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে লোন-টু-ভ্যালু (LTV) অনুপাত বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ বাড়ির মোট মূল্যের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া শুরু হয়।

২০০২ সালের আগে ব্যাঙ্কগুলির সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল— যদি কেউ হোম লোন (Home Loan) না শোধ করে, তবে ব্যাংক কীভাবে অর্থ উদ্ধার করবে। কোনও শক্তিশালী আইন না থাকায় ব্যাঙ্কগুলি ভয় পেত অর্থ আটকে যাওয়ার। এই সমস্যার সমাধান হয় ২০০২ সালে SARFAESI Act (সারফেসি আইন) প্রণয়নের মাধ্যমে। এই আইনে ব্যাঙ্কগুলিকে অনুমতি দেওয়া হয় যে, কোনও ঋণগ্রহীতা অর্থ না শোধ করলে, ব্যাঙ্ক তার সম্পত্তি নিজের দখলে নিয়ে নিলামে বিক্রি করে টাকা উদ্ধার করতে পারবে।
এই আইন ব্যাঙ্কগুলিকে ভরসা ও আত্মবিশ্বাস দেয়। এরপর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি— উভয় ক্ষেত্রের ব্যাঙ্কই বড় পরিসরে গৃহঋণ দিতে শুরু করে। ডি. বি. রেমেডিওসের সেই প্রথম হোম লোনই (Home Loan) ভারতের আধুনিক হাউসিং ফাইন্যান্স ব্যবস্থার সূচনা হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।












