বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ রেলপথকেই (Indian Railways) যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। এমনকি, রেলকে দেশের “লাইফলাইন”-ও বলা হয় থাকে। এমতাবস্থায়, ট্রেনে সফরের সময়ে আমরা সবসময় দেখি যে রেল ট্র্যাকে পাথর বিছিয়ে রাখা হয়। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দূরত্ব এভাবেই পাথরের উপস্থিতি দেখতে পাই আমরা। আমরা অনেকেই এই পাথরগুলির আসল কাজ সম্পর্কে জানি না। শুধু তাই নয়, সুষ্ঠুভাবে রেল চলাচলের ক্ষেত্রে রেল ট্র্যাকে থাকা এই পাথরগুলির ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা ওই পাথরগুলির কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করছি।
রেলপথ কিভাবে স্থাপন করা হয়: প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, রেল লাইনের নিচে কংক্রিটের তৈরি প্লেট থাকে। এগুলিকে বলে স্লিপার। এই স্লিপারগুলির নিচেই পাথরগুলিকে বিছিয়ে দেওয়া হয়। এগুলিকে ব্যালাস্টও বলা হয়। এগুলির নিচে আবার পৃথক পৃথকভাবে মাটির দু’টি স্তর থাকে। আর সবচেয়ে নিচে থাকে স্বাভাবিক ভূমি। এমতাবস্থায়, রেল ট্র্যাকগুলিকে সাধারণ ভূমি থেকে সামান্য উচ্চতায় রাখা হয়।
ধারালো পাথর বিছিয়ে দেওয়া হয়: ট্র্যাকে রাখা ব্যালাস্টগুলি হল একটি বিশেষ ধরণের পাথর। যদি এই ব্যালাস্টের পরিবর্তে বৃত্তাকার পাথর ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে তারা একে অপরের থেকে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে ট্র্যাকটি নির্ধারিত স্থানের বাইরে চলে গিয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। এমতাবস্থায়, এই পাথরগুলি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং ধারালো হয়। যে কারণে সেগুলি একে অপরকে শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারে এবং সহজেই ট্রেনের ওজনও সামলাতে পারে।
এগুলির কাজ: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একটি ট্রেনের ওজন হয় প্রায় ১০ লক্ষ কেজি। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র ট্র্যাক এই ওজন বহন করতে পারে না। তাই, কংক্রিটের তৈরি স্লিপার এবং এই পাথরের সাথে লোহার তৈরি ট্র্যাক বিপুল ওজনের ট্রেনের ভার বহন করে নেয়। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওজন এই পাথরের উপরেই থাকে। এমনকি, এই পাথরের কারণেই কংক্রিটের তৈরি স্লিপারগুলি তাদের জায়গা থেকে সরে যায় না।
আরও পড়ুন: Indian Railways: মাত্র দুই অক্ষর, ভারতের সবথেকে ছোট নামের রেল স্টেশন হল এটি! রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যে
ট্র্যাকের নিরাপত্তা: ট্রেন যখন ট্র্যাকের উপর দিয়ে তীব্র গতিবেগে চলে তখন সেখানে কম্পন তৈরি হয়। যার ফলে ট্র্যাকটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই, কম্পন কমাতে এবং ট্র্যাকের বিস্তার এড়াতে ওই ট্র্যাকে পাথর বিছিয়ে দেওয়া হয়। ট্র্যাকের উপর বিছানো পাথরগুলি কংক্রিটের স্লিপারকে এক জায়গায় স্থির থাকতে সাহায্য করে। যার ফলে ট্রেনের ওজনও সামলে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: এবার ট্রেনে চেপে কলকাতা থেকেই সরাসরি পৌঁছে যান সিকিমে! কবে থেকে শুরু পরিষেবা? সামনে এল বড় তথ্য
বৃষ্টির দিনে দুর্দান্ত কাজ: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ট্র্যাকগুলিতে এই পাথর বিছিয়ে দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হল এর ফলে বৃষ্টি হলেও ট্র্যাকে জল জমে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে না। কারণ, বৃষ্টির জল যখন ট্র্যাকে পড়ে তখন তা এই পাথরের মাধ্যমে সরাসরি মাটিতে চলে যায়। যার ফলে ট্রেন চলাচলে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।
বেড়ে উঠবে গাছপালা: এছাড়াও, ট্র্যাকে পাথরগুলি না থাকলে সেখানে ঘাস এবং গাছপালা জন্মে যাবে। যার ফলে ট্র্যাকে ট্রেন চালাতে গিয়ে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে চালকদের।