বিশ্বকাপের গ্রূপপর্বে শেষ রাউন্ডের ম্যাচগুলি এক সময়ে কেন? জানতে গেলে পিছিয়ে চলুন ৪০ বছর

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কাতার বিশ্বকাপে ৩২টি দলে ইতিমধ্যেই গ্রূপে পর্বে দুই রাউন্ডের ম্যাচ খেলে ফেলেছে। মঙ্গলবার থেকে আরম্ভ হবে তৃতীয় পর্বের খেলা। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল এবং মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল এই দুই রাউন্ডেই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করে ফেলেছে। দুই রাউন্ডের শেষে আয়োজক কাতার ও উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা বিদায় নিয়েছে। এখনও বাকি ২৭ টি দলের পরবর্তী রাউন্ডের জন্য যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ২৯ শে নভেম্বর থেকে গ্রুপ পর্বের সব দলগুলি অন্তিম পর্বের ম্যাচ খেলতে আরম্ভ করবে। এতদিন অবধি চারটি ম্যাচ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শুরু হলেও আজ থেকে আর তা হবে না। প্রত্যেকটি গ্রুপের বাকি দুটি ম্যাচ আজ থেকে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, রাত সাড়ে ৮টা থেকে আরম্ভ হবে প্রথম গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ। একই সঙ্গে দ্বিতীয় গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচই আরম্ভ হবে রাত সাড়ে ১২টা থেকে। কেন ভিন্ন সময়ে না হয়ে একই সময়ে দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এর জবাব পেতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে আরও ৪০ বছর অর্থাৎ ১৯৮২ বিশ্বকাপে। সেবার স্পেনে আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্বকাপের। ২৫শে জুন তারিখে, গ্রূপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া মাঠে নেমেছিল। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল গিহনের এল মোলিনন স্টেডিয়ামে। এই ম্যাচটিকে পরবর্তীতে ‘গিহনের অপমান’ নামে স্মরণ করা হয়।

১৯৮২ বিশ্বকাপে আফ্রিকান দল আলজেরিয়া দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। তাদের গ্রূপেই ছিল পশ্চিম জার্মানি, চিলি ও অস্ট্রিয়া। আলজেরিয়া তাদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপে ইউরোপের কোনও দলকে পরাজিত করে অঘটন ঘটিয়েছিল তারা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তারা ০-২ গোলে পরাজিত হন। এরপর তৃতীয় ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে জয় পায়। আলজেরিয়া প্রথম আফ্রিকান দল যারা এক বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ জিতেছে।

আলজেরিয়া ও চিলির ম্যাচের পরেরদিন ওই একই গ্রূপে থাকা পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার নিজেদের মধ্যে শেষ ম্যাচ খেলেছিল। এই দুই দলের জন্য এগিয়ে যাওয়া সমীকরণ পরিষ্কার ছিল। পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়াকে এক বা দুই গোলের ব্যবধানে পরাজিত করলে উভয় ইউরোপের দলই পরের রাউন্ডে যাবে এবং আলজেরিয়া বিদায় নেবে। অন্যদিকে পশ্চিম জার্মানি ৪-০ বা তার বেশি ব্যবধানে জিতলে তাদের সঙ্গে নকআউটে যাবে আলজেরিয়ার দল। আর পশ্চিম জার্মানি ৩-০ ফলে জিতলে আলজেরিয়া এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যে একটি টাইব্রেকার হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে কারা যাচ্ছে তা নির্ধারিত হতো পরিণত হত। খুব স্বাভাবিকভাবেই আলজেরিয়ান দল চেয়েছিল পশ্চিম জার্মানি ম্যাচটি ৪-০ বা তার বেশি ব্যবধানে জিতুক। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে ঝড়ের গতিতে বেশ কিছু আক্রমণ করে গোল তুলে নেয় পশ্চিম জার্মানি। আলজেরিয়ান সমর্থকদের মনে আশা জেগে ওঠে। কিন্তু কিছুদিন আগে আলজেরিয়ার কাছে নিজেদের হারের ধাক্কা মেনে নিতে পারেননি বেশ কিছু জার্মান ফুটবলার। তাদের কাছে ওই হার ছিল নিজেদের জাত্যাভিমানের ওপর খাঁড়ার কোপ। তাই তারা কিছুতেই চাইনি যে আলজেরিয়া পরের রাউন্ডে যাক এবং বাকি ম্যাচে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ফুটবল খেলে যাতে একসাথে পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া পরবর্তী রাউন্ডের যোগ্যতা অর্জন করে। ১-০ ফলেই ম্যাচটি শেষ হয় এবং আল চিরিয়া জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সমান সংখ্যক পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও গোল পার্থক্যের কারণে ছিটকে যায় বিশ্বকাপ থেকে। এই ঘটনাই ইতিহাসের ‘ডিসগ্রেস অফ গিহন’ বা ‘গিহনের লজ্জা’ বলে পরিচিত।

পশ্চিম জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠলেও ফিফা রায় দিয়েছিল যে কোনও দলই কোনও নিয়ম ভঙ্গ করেনি এবং কোনও ফিক্সিং হয়নি। তবে এই বিশ্বকাপের পর গ্রূপ পর্বের শেষ ম্যাচের ফরম্যাটে বড়সড় পরিবর্তন আনে ফিফা। তারপর থেকেই একটি গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ একই সময়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কোনও দলকে ভুল সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয় কারণ নিজেদের খেলার সময় অন্য ম্যাচে কি চলছে সেই নিয়ে কেউ চিন্তা করে কেউ খেলার ভঙ্গিতে পরিবর্তন করবে না।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর