বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০২১ সালে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা কেরল দখল কোর্টে না পারলেও আসাম দখল করতে কোন অসুবিধা হয়নি বিজেপির। বিরোধী নেতৃত্বের অনেকেই আশা করেছিলেন বিশেষত এনআরসির পর আসামের জনরোষ হয়তোবা সাহায্য করবে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে। কিন্তু দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রায় সকলেই এগিয়ে রেখেছিলেন বিজেপিকে। অনুমান ভুল হয়নি। নিজেদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ফের একবার আসামে ক্ষমতায় ফিরেছে গেরুয়া শিবির।
এই জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ফের একবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। গুয়াহাটির অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর তত্ত্বাবধানে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য শপথ গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু আসামের বিজেপিকর্মীদের মতে, এই মুহূর্তে হেমন্ত বিশ্ব শর্মা দলের জন্য ভীষন জরুরী এক মুখ। ২০১৬ সাল থেকে পার্টির জয়ে যথেষ্ট বড় ভূমিকা ছিল হেমন্তের। শুধু তাই নয় ২০১৯ সালের লোকসভার ক্ষেত্রেও পূর্ব-উত্তর অঞ্চল থেকে সবথেকে বেশি সাংসদ পেয়েছিল বিজেপি।
অনেকেই মনে করেন এই জয়ে যথেষ্ট বড় ভূমিকা ছিল হেমন্তের। আর তারই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবিবারই হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে বিজেপির বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। নর্থইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সংযোজক হিসেবে বহু অকংগ্রেসী সরকার গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছেন হেমন্ত। আর সেই কারণেই আগামী লোকসভার কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসালো পার্টি, অন্তত এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এক বরিষ্ঠ নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, সর্বানন্দ সোনোয়াল যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে ২০১৬ সালের জয় বজায় রেখেছে পার্টি। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজ্যের ৬০ জন বিধায়কের ৪২ জনই খোলাখুলি সামনে থেকে সমর্থন করেছেন হেমন্তকে। শুধু তাই নয় এ বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে চিঠি লেখেন তারা।
তাই পূর্ব উত্তর অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে এই মুহূর্তে হেমন্তকে পদে রাখা ভীষন জরুরী। অন্তত এমনটাই মনে করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাদের মতে বাকি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক রয়েছে হেমন্তর। পরবর্তীকালে লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যা ব্যবহার করতে পারবে গেরুয়া শিবির।
বাংলায় বহু চেষ্টার পরেও জয় পায়নি গেরুয়া শিবির। সেই কারণে আগামী লোকসভার কথা মাথায় রেখে এই মুহূর্তে আসামের শক্ত ঘাঁটিকে কোনোভাবেই নষ্ট করতে চাইবে না তারা। বিজেপির ওই নেতার বক্তব্য অনুযায়ী এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মন্ডলেও স্থান পেতে পারেন বিজেপির প্রদেশ অধ্যক্ষ রঞ্জিত কুমার দাস।
তিনি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির জায়গা নিতে পারেন বলেই খবর। অন্যদিকে এতদিন পর্যন্ত আসামের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মূলত ছিলেন পূর্ব আসামের, কিন্তু এই প্রথম পশ্চিম আসাম থেকে মুখ্যমন্ত্রী হলেন হেমন্ত।
২০১৪ সালে তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পার্টি ছেড়েছিলেন হেমন্ত। সেসময় ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন তিনি, কিন্তু তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে তার মতপার্থক্যের জেরে দল ত্যাগ করে ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন তিনি। আর তারপরেই বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন হেমন্ত।
২০১৯ সালের লোকসভা ক্যাম্পেইনেও তার বড় ভূমিকা ছিল। আসামের বর্তমান বিজেপি বিধায়কদের মতে, সর্বানন্দ যেমন পূর্ব আসাম থেকে একাধিক বিধায়ক দিয়েছেন বিজেপিকে। আগামী দিনের সেই কাজই এগিয়ে নিয়ে যাবেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মাও। সব মিলিয়ে আগামী লোকসভা নিরিখে বিজেপির এই পদক্ষেপ কতটা সফল হয় সেদিকেই এখন তাকিয়ে থাকবে রাজনৈতিক মহল।