ন্যানো কারখানার জন্য কেন সিঙ্গুরকেই বেছে নিয়েছিলেন রতন টাটা? অবশেষে ফাঁস হল আসল সত্য

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ৯ অক্টোবর; ভারতের শিল্পক্ষেত্রে ঘটে মহীরুহ পতন। চিরশান্তির দেশে পাড়ি দেন ভারতের অন্যতম বিত্তশালী, জনদরদী ব্যক্তি রতন টাটা (Ratan Tata)। তবে তিনি চলে যাওয়ার পর গোটা টাটা গোষ্ঠীর মজবুত ভিত কেঁপে উঠেছে। আর এই আবহেই উঠে এসেছে একের পর এক বিভিন্ন তথ্য। বিশেষ করে রতন টাটার অতীত নিয়ে মানুষের মনে জেগেছে আগ্রহ। ব্যক্তিগত জীবনের চর্চা তো ছিলই, তবে এখন সবথেকে বেশি চর্চিত হচ্ছে কেন রতন টাটা ন্যানো কারখানার জন্য পশ্চিমবঙ্গকেই বেছে নেন এই বিষয়টি? সিঙ্গুরেই কেন ন্যানোর স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন তিনি? এতদিন পর এই বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন রতন টাটার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ নীরা রাডিয়া৷

রতন টাটার (Ratan Tata) সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির স্বপ্ন:

প্রায় কয়েক বছর আগের কথা, তখন বাংলায় রতন টাটা (Ratan Tata) নিজের স্বপ্নের কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেইসাথে মধ্যবিত্তদের কম টাকায় চারচাকার স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ঠিক কি কারণে সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প তৈরি হলো না সেকথা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু এটা অজানা যে কেন তিনি পশ্চিমবঙ্গে ন্যানো কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন? এই বিষয়ে কর্পোরেট জনসংযোগ আধিকারিক নীরা রাডিয়া একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি একসময় টাটা গোষ্ঠীর জনসংযোগ বিভাগটি দেখতেন, সেই সূত্রেই তিনি এতকিছু জানেন। শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন কেন এক লক্ষ টাকার ন্যানো গাড়ি প্রকল্প তৈরি করতে চেয়েছিলেন টাটা।

Why Ratan Tata chose Singur for nano factory.

কেন সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন শিল্পপতি: নীরা দেবী জানিয়েছেন, “স্বপ্ন দেখতেন রতন টাটা (Ratan Tata)। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। ভারত ছিল ওঁনার গর্ব। দেশকে, দেশের মানুষকে বরাবর ভালোবাসতেন। তিনি অনুভব করেছিলেন ভারতে বিশ্বায়নের প্রয়োজন। আর তাই উন্নত প্রযুক্তির আমদানি ঘটিয়ে দেশের মানুষকে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়ার কথা ভাবেন।” এরপরই তিনি জানান ঠিক কেন এক লাখের ন্যানো গাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন রতন টাটা?

আসলে, রতন টাটা (Ratan Tata) চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষদের জন্য কিছু করতে। দু’চাকায় চেপে যাতায়াত করলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। তাই বৃষ্টিতে যাতে ভিজতে না হয় তার জন্যই নতুন উপায় বার করেছিলেন। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে শিল্পায়নের ভাবনা চিন্তা করেন, এমনটাই জানান নীরা রাডিয়া। এরপরই উঠে আসে মূল তথ্য। নীরা দেবীর হাত ধরে জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি করার মূল কারণ।

Why Ratan Tata chose Singur for nano factory.

এই বিষয় তিনি বলেন, রতন টাটা (Ratan Tata) চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে শিল্প আসুক, সেইসাথে কর্মসংস্থানের উৎস তৈরি হোক। মন থেকে উনি সিঙ্গুরকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন৷ তবে তিনি কোনো রাজনীতি চাননি। রাজ্যের শিল্পায়ন গড়ে তোলার জন্যই এই স্বপ্ন বুনেছিলেন। এমনকি সেই সাথে অনেক হিসেব কষেই গাড়ির দাম এক লাখে তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। তবে এই পরিকল্পনার জন্য রতন টাটাকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। তবুও তিনি স্বপ্ন বুনেছিলেন।

আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে একের পর এক চমক Jio-র! সামনে এল বিশেষ চশমা, চমকে দেবে এর ফিচার্স

যদিও, রতন টাটা (Ratan Tata) যে পশ্চিমবঙ্গে ন্যানো কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন একথা টাটা গোষ্ঠীর অধিকাংশই জানতেন না বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন নীরা রাডিয়া। পরবর্তীতে তিনি ঘোষণা করলে সকলেই অবাক হয়ে যান। তবে, রাজনীতির রং আজ সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি হওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন: একটা ম্যাচেই করলেন বাজিমাত! ICC র‌্যাঙ্কিংয়ে বিরাট লাফ সঞ্জুর, জানলে হয়ে যাবেন অবাক

তিনি আরও জানান, শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠেনি। আর যদি সেখানে এই শিল্পায়ন বাস্তবে পরিণত হতো তাহলে কলকাতা থেকে সিঙ্গুরের চারপাশের চিত্রটাই বদলে যেত। বর্তমানে এই ন্যানো কারখানার জন্য গুজরাটের সানন্দা এখন গুরুগ্রামে পরিণত হয়েছে এমনটাই জানান নীরা দেবী। আর যদি গুজরাটে সেই জায়গা দেখা যায় সেখানে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ওই এলাকার চিত্রপট পুরোটাই বদলে গেছে। বাংলাতেও হয়তো এমন কিছুই হত, যা অবশেষে হয়নি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর