বাংলাহান্ট ডেস্ক : ছেলেকে হারিয়েছেন বছর দেড়েক আগে। কিন্তু বৌমা বলে কি সে মেয়ে নয়? নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিধবা পুত্রবধূর বিয়ে দিলেন শ্বশুর শ্বাশুড়ি। মন ছুঁয়ে যাওয়া এই ঘটনাটি ঘটেছে হলদিয়ার সুতাহাটার অনন্তপুর এলাকায়।
বছর কয়েক আগে একমাত্র ছেলে অর্নবের বিয়ে দিয়ে পূত্রবধূ শুভ্রাকে ঘরে এনেছিলেন নকুল এবং নন্দিতা ঘাঁটি। ছবির মতই সুন্দর চলছিল সব। পুত্রবধূ যে কখন মেয়ে হয়ে উঠেছিল তা বোঝেননি তাঁরাও। বরাবর ভালোবাসা দিয়ে শুভ্রাকে আগলে রেখেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটে হঠাৎ। ২০২০ সালে মহিষাদলে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অর্ণবের। ততদিনে শুভ্রা-অর্ণবের কোলে এসেছে বছর দেড়েকের শিশুপুত্র।
ছেলেকে হারিয়ে শোকবিহ্বল বাবা মা আবারও বাঁচতে শুরু করেন মেয়ে শুভ্রাকে আঁকড়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকেই শুভ্রাকে বলেছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে যেতে। কিন্তু ‘বাবা মা’ কে ফেলে যেতে কিছুতেই রাজি হননি বছর ২৩ এর ওই তরুণী। থেকে গিয়েছেন তাঁদের খুঁটি হয়ে। কিন্তু হাজার হোক বাবা মা তো। এতটুকু বয়সে বিধবা হয়ে সারাজীবন কেমন করে একা থাকবে মেয়ে? এই চিন্তাতেই পাগল হয়ে উঠছিলেন নন্দিতা এবং নকুল ঘাঁটি। অবশেষে পথ বেরোলো। বৌমা তথা মেয়ে শুভ্রাকে আবারও বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। চলল যথোপযুক্ত পাত্র খোঁজাও।
কথায় বলে যে খায় চিনি তাকে জোগান স্বয়ং চিন্তামনি। খানিক খোঁজাখুঁজির পর মিলল সৎপাত্রও। হলদিয়ার রামগোপালচকের বছর ২৬ এর মধু সাঁতরার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হল শুভ্রার। শুভ্রা অর্ণবের ছেলে মৈণাককেও নিজের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করলেন মধু। অবশেষে ধুমধাম করে হল বিয়ে। নিজে হাতে বৌমা শুভ্রার কন্যাদান করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য নকুল। সোনার হার দিয়ে আশির্বাদ করলেন নন্দিতা। কোভিড বিধি মেনে বসা এই বিয়ের অনুষ্ঠানে নবদম্পতিকে আশির্বাদ করে গেছেন সকলেই।
কথায় বলে, মধুরেণ সমাপয়েৎ। আর আক্ষরিক অর্থেই তেমনটাই ঘটল শুভ্রার জীবনে। মধুর আগমনে মধুর হোক তাদের ভবিষ্যৎ। ত রোজকার এত বধূ নির্যাতন, এত অত্যাচারের খবরের মধ্যেও এভাবেই পুত্রবধূদের আপন করে নিন আরও অনেক নকুল নন্দিতারা, বাড়ির মেয়েই হয়ে উঠুক বৌমারাও, আপাতত এটুকুই চাওয়ার।