বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত (India) থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মরুভূমির জাহাজ-উট। একসময় রাজস্থানের বালুকাবেলায় উট ছাড়া মরুভূমি ভাবাই যেত না। আজ সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে দ্রুত। সরকারি তথ্য বলছে, ১৯৭৭ সালের উটসুমারির তুলনায় এখন দেশে উটের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই ধারা চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই ভারত থেকে উট কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
ভারত (India) থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে উট!
ভারতের (India) মধ্যে সবচেয়ে বেশি উট দেখা যায় রাজস্থানে, তারপর গুজরাটে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে মরুভূমির এই রাজ্যগুলো বিশেষ জনপ্রিয়, আর তার অন্যতম আকর্ষণই ছিল উটের পিঠে মরুভূমি ভ্রমণ। রাজস্থানের বিকানের, জয়সলমের বা মেওয়ার অঞ্চলে থর মরুভূমির বুক চিরে চলা উটের কাফেলাই ছিল রাজস্থানের চিহ্ন। শুধু পর্যটন নয়, উট রাজস্থানের গ্রামীণ অর্থনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ছিল। উটের দুধ পুষ্টিকর, উট টেনে নিয়ে যায় ভারী মাল, কৃষিকাজে সাহায্য করে— এইভাবে বহু পরিবার নির্ভর করত উটের উপর।
আরও পড়ুন:তারকা বলে ‘ভিআইপি পরিষেবা’? লাইনে না দাঁড়িয়ে বড়মার সামনে বসে পুজো দিয়ে তুমুল ট্রোলড শুভশ্রী
ভারতে (India) মূলত পাঁচটি প্রজাতির উট পাওয়া যায়— বিকানেরি, মেওয়ারি, জয়সলমেরি, কচ্ছি ও খাড়াই। এর মধ্যে প্রথম তিনটি প্রজাতি রাজস্থানের থর মরুভূমিতে এবং কচ্ছি ও খাড়াই প্রজাতি গুজরাটের রন এলাকায় বাস করে। রনের উটেরা অন্যদের থেকে আলাদা, কারণ তারা ভালো সাঁতার জানে। এছাড়াও, লাদাখে পাওয়া যায় এক বিরল প্রজাতির উট — ব্যাকট্রেন ক্যামেল, যাদের দুটি কুঁজ থাকে। এদের সংখ্যা তিনশোরও কম এবং তারা ইতিমধ্যেই বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে।
ভারতে (India) উটের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল— পশুপালক সমাজের তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহ। আধুনিক পেশার আকর্ষণে তারা উটপালনের ঐতিহ্য ছেড়ে দিচ্ছে। তাছাড়া দেশের প্রধান পশুপালন ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যেও উটের নাম নেই। ফলে, উট প্রজনন ও চিকিৎসা বিষয়ে কোনও বৈজ্ঞানিক সহায়তা বা প্রশিক্ষণও উটপালকরা পান না।
আরও পড়ুন:রেলে চাকরি! ৫,৮১০ শূন্যপদে নিয়োগ, আবেদন করুন এই ভাবে
তবে আশার কথা, বিষয়টি নিয়ে এখন সচেতন হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত মাসেই কেন্দ্রের মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক উট সংরক্ষণের জন্য একটি খসড়া নীতি প্রস্তাব (Draft Policy Paper) তৈরি করেছে। এই নীতির খসড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনার পর চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পেশ করা হবে। অনুমোদন মিললেই শুরু হবে ভারতের (India) প্রথম “ন্যাশনাল ক্যামেল সাসটেইনিবিলিটি ইনিশিয়েটিভ” (National Camel Sustainability Initiative)। এই প্রকল্পের লক্ষ্য থাকবে উটের প্রজনন বৃদ্ধি, পশুপালকদের আর্থিক সহায়তা, উটের দুধ ও অন্যান্য পণ্যের বাণিজ্যিক উন্নয়ন এবং রাজস্থান ও গুজরাটের মরুভূমি অঞ্চলে উট-ভিত্তিক ট্যুরিজম পুনরুজ্জীবিত করা।
একসময় ফেলুদার গল্পে লালমোহনবাবুর মতো উটে চড়ার স্বপ্ন ছিল বহু ভারতীয়র (India)। আজ সেই স্বপ্নই হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ সফল হলে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মও আবার মরুভূমির বুকে উটে চড়ে রাজস্থানের সোনালি সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবে।