বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) সফলভাবে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে। যার মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত (India)। শুধু তাই নয়, ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠে “সফট ল্যান্ডিং” করার ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য আমাদের সবাইকে খুশি করে তুললেও ঠিক সেই আবহেই এবার এক তুমুল চাঞ্চল্যকর বিষয় সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, চন্দ্রযান-৩-এর লঞ্চিং প্যাড নির্মাণকারী কর্মীরা গত ১৮ মাস ধরে বেতনের জন্য অপেক্ষা করছেন। অর্থাৎ, ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁরা বেতন পাননি। এমনকি, উপায় না পেয়ে একাধিক কর্মচারী রাস্তার খাবার বিক্রি করতেও বাধ্য হচ্ছেন।
এই প্রসঙ্গে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চন্দ্রযান ৩-এর জন্য লঞ্চিং প্যাড, ফোল্ডিং প্ল্যাটফর্ম এবং স্লাইডিং ডোর তৈরির সাথে যুক্ত কর্মচারীরা এখন রাস্তার ধারে খাবার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর কারণ হল, তাঁরা ১৮ মাস ধরে বেতন পাননি। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, রাঁচিতে স্থিত হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেডের (Heavy Engineering Corporation Limited, HEC) ২,৮০০ কর্মচারী গত ১৮ মাস ধরে বেতন পাননি।
HEC-র তরফেই চন্দ্রযান-৩ এর লঞ্চপ্যাড তৈরি করা হয়। এদিকে, HEC এখন ISRO-এর জন্য আরেকটি লঞ্চপ্যাড তৈরি করছে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে রাস্তায় খাবার বিক্রি করছেন HEC-র টেকনিশিয়ানরা। ঠিক সেইরকমই এক টেকনিশিয়ান হলেন দীপক কুমার উপরারিয়া। তিনি গত কয়েকদিন ধরে রাস্তার ধারে ইডলি বিক্রি করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের হারদা জেলার বাসিন্দা দীপক ২০১২ সালে বেসরকারি সংস্থার কাজ ছেড়ে HEC-তে যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তাঁর বেতন ছিল ৮ হাজার টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ২৫ হাজার। এদিকে, HEC-তে কাজের সুযোগ পেয়ে জীবনে বড় কিছু করার লক্ষ্য ছিল তাঁর। কিন্তু, ভাগ্যের পরিহাসে তাঁকে এখন রাস্তায় খাবার বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২৫ বছরে প্রথমবার, অর্থনীতির ধাক্কায় কোমর ভাঙল চীনের! বিদেশি কোম্পানিগুলোর উপর চলছে নজরদারি
বিবিসির সাথে কথোপকথনের সময়, তিনি জানান যে, “প্রথমে আমি ক্রেডিট কার্ডের ওপর ভর করে আমার পরিবার চালিয়েছি। তারপরে আমার ২ লক্ষ টাকার ঋণ হয়ে যায় এবং আমাকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। এরপর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে শুরু করি। এখনও পর্যন্ত আমি ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি এবং কাউকে টাকা ফেরত দিতে পারিনি। এরপর স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে সংসার চালাতে হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: দূতাবাস নয়, এই মন্দিরেই ভগবান বানিয়ে দেন আমেরিকার ভিসা! নিতে আসেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত
দীপক আরও বলেন, ‘যখন দেখলাম খিদের কারণে মারা যেতে হবে তখন একটা ইডলির দোকান খুললাম। আমার স্ত্রী ভালো ইডলি বানায়। তাই আমি প্রতিদিন ৪০০ টাকার ইডলি বিক্রি করছি। যেখানে কখনও কখনও ১০০ টাকা লাভ হচ্ছে এবং এটি দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।”
Meet Deepak Kumar Uprariya who sells Tea & Idli in Ranchi. He is a Technician, who worked for building ISRO's Chandrayaan-3 launchpad. For the last 18 months, he has not received any salary.
"When I thought I would die of hunger, I opened an Idli shop" (BBC Reports) pic.twitter.com/cHqytJvtfj
— Cow Momma (@Cow__Momma) September 17, 2023
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীপক জানিয়েছেন তাঁর দু’জন মেয়ে রয়েছে এবং গত এক বছর ধরে তিনি তাঁদের স্কুলের ফি দিতে পারছেন না। পাশাপাশি, ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে শুধু দীপক নন, বরং ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আরও একাধিক কর্মচারীও রাস্তার খাবার বিক্রি করছেন। মধুর কুমার নামে একজন কর্মচারী মোমো বিক্রি করছেন এবং প্রসন্ন ভোই বিক্রি করছেন চা। অপরদিকে ফটোগ্রাফি করছেন মিথিলেশ কুমার নামের এক কর্মচারী।