বাংলা হান্ট ডেস্ক: ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় (India) নারীরা ছিলেন অন্তঃপুরচারিণী। কর্মজগতে ব্যতিক্রমী হিসেবে গুটিকতক উচ্চশিক্ষিতা ভারতীয় তরুণী সেকালে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এদিকে, স্বাধীন ভারতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার সংবিধান স্বীকৃত। বর্তমানে ভারতে কাজের বাজারের হাল করুণ। চাকরিবাকরি প্রায় নেই বললেই চলে। সরকারি শূন্যপদগুলি পূরণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, ভারতে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক এবং নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক যৌথভাবে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে।
পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভের পেশ করা তথ্যানুসারে, গত ৭ বছরে সারা দেশে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৭-২০১৮ সালে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার ছিল ২৩.৩ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ সালে সর্বশেষ যে তথ্য মিলেছে সেই অনুযায়ী, কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার প্রায় ১৪ শতাংশের কাছাকাছি বেড়ে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক এই তথ্য প্রকাশ করে কার্যত দাবি করেছে, ভারতীয় মহিলারা কাজের বাজারে প্রমাণ করেছেন “যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে”। দেশের উন্নতির জন্যে কাজের বাজারে আরও বেশি সংখ্যক মহিলার যোগদান গুরুত্বপূর্ণ একথা বলাবাহুল্য।
তবে, এনডিএ আমলে কেন্দ্রীয় সরকার কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদান সম্পর্কে যে তথ্য পেশ করেছে বিশ্বব্যাঙ্কের পেশ করা তথ্য এর সঙ্গে মিলছে না। ভারতে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদান সম্পর্কে বিশ্বব্যাঙ্কের পেশ করা সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার ৪ শতাংশ কমেছে। এই সময়সীমায় মহিলাদের কাজের বাজারে যোগদানের হার ২৮ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২৪ শতাংশে এসে ঠেকেছে।ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবির সঙ্গে মিলছে না বিশ্বব্যাঙ্কের পেশ করা তথ্য। ফলে সত্যাসত্য নিয়ে খানিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: শুরু হলনা IPL, তার আগেই KKR থেকে বিদায়ের কথা! বড় প্রতিক্রিয়া গৌতম গম্ভীরের
যদিও, কেবল ভারত নয়, কাজের বাজারে গোটা বিশ্বজুড়েই মহিলারা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার। এসম্পর্কে বিশ্বব্যাঙ্ক সর্বশেষ যে তথ্য পেশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গোটা বিশ্বে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের হার ৪৭.৩ শতাংশ। এই ব্যাপারে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সারা বিশ্বে মহিলারা কাজের বাজারে লিঙ্গবৈষম্যের শিকার”। উল্লেখ্য যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ক্লডিয়া অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত তৃতীয় মহিলা। ক্লডিয়া নোবেল পেয়েছেন কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদান সম্পর্কে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে।
আরও পড়ুন: চিন-পাকিস্তানের খেলা শেষ! প্রস্তুত ভারতীয় সেনাবাহিনীর STEAG ইউনিট, যুদ্ধক্ষেত্রে হবে ধামাকা
ভারতীয় সমাজ স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পেরিয়েও পুরুষতান্ত্রিক। ফলে মহিলারা অনেকক্ষেত্রে কাজের বাজারে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, কাজের বাজারে গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের যোগদানের সুযোগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই দাবি সত্ত্বেও বহু ভারতীয় নারী-পুরুষ নাগরিক কর্মহীন। এদিকে কেন্দ্রের দাবি, এনডিএ জমানায় ২০১৭-২০১৮ সালে কাজের বাজারে ১৫ বছর থেকে ৫৯ বছর বয়স্ক নাগরিকের অংশগ্রহণের হার ছিল ৫১.৫ শতাংশ। এরপর ২০২২-২০২৩ সালে সেই হার বেড়ে ৫৮.৩ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এমতাবস্থায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কাজের বাজারে মহিলাদের যোগদানের প্রসঙ্গ শাসকপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।