বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যজুড়ে আশঙ্কা মতোই তান্ডব শুরু করেছে ইয়াস। গতবছর আমফানের তুলনাতেও ছবিটা হয়ে উঠেছে আরও অনেক বেশি মারত্মক। সকাল এগারোটা নাগাদ ওড়িশার বালাসোরে ইয়াসের ল্যান্ড ফল হলেও যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বিশেষত একইসঙ্গে ভরা কোটাল থাকায় বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছে জলোচ্ছ্বাস। বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা, দুই মেদনীপুর সহ বিস্তীর্ন এলাকায়। সত্যি হল সেই আশঙ্কাই।
বাঁধ ভাঙলো খেজুরিতেঃ
সকাল থেকেই ইয়াসের প্রভাবে দুরন্ত জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল দীঘার সমুদ্র উপকূলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়নি শেষ ৫০ বছরেও। শুধু দীঘা নয় বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়ল পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোশিয়ারি এবং ঝাড়গ্রামও। গত রাত থেকে দুরন্ত বৃষ্টি শুরু হয় সমস্ত এলাকা জুড়ে। ভেঙে পড়ে গাছ জলমগ্ন হয়ে পড়ে ঘরবাড়ি। ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল জুড়ে জারি করা হয়েছে লাল সর্তকতা। ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন গোপীবল্লভপুর। তবে এই মুহূর্তে চরম বিপাকে এলাকাবাসী।
জলস্তর বাড়লো রূপনারায়ণেও, জলমগ্ন তমলুকঃ
অন্যদিকে ইয়াসের প্রভাবে জল বেড়েছে রূপনারায়ণেও। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২০-২৫ বছরে যা ঘটেনি তাই ঘটল এবার। জল উঠে এল তমলুক শহরের একাংশে। রূপনারানের জল বাড়ার ফলে তমলুক পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদখোয়া এলাকায় এ দিন হুহু করে ঢুকতে শুরু করে জল। জলমগ্ন হয়ে পড়ে বাড়িঘর। আতঙ্কে রীতিমতো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। কারণ এই প্রথমবার রাস্তা পেরিয়ে জল উঠে এসেছে জনবসতিপূর্ন এলাকাতেও। কাঁচা বাড়িগুলোকে এই মুহূর্তে দ্রুত খালি করার চেষ্টা করছে প্রশাসন। কোথাও যাতে কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে কারো মৃত্যু না হয় সেদিকেও নজর রাখছে তারা।
ডুবল কপিল মুনির আশ্রম, ভাঙলো মুড়িগঙ্গার বাঁধঃ
একদিকে যখন ইয়াস রীতিমতো তান্ডব চালাচ্ছে দুই মেদিনীপুরে বাদ পরল না উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনাও। এমনিতেই এই জেলাগুলিতে সর্তকতা জারি করেছিল প্রশাসন, কিন্তু ইয়াসের ধ্বংসাত্মক প্রভাব আশঙ্কার থেকেও অনেক বেশি। ইতিমধ্যেই ভেঙে গিয়েছে মুড়িগঙ্গার বাঁধও। যার জেরে জলমগ্ন কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, সাগরদ্বীপ, বকখালি, সাগর সহ উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকা। জলমগ্ন কপিল মুনির আশ্রমও। সূত্রের খবর অনুযায়ী, জল ঢুকে পড়েছে কাকদ্বীপ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও। যার ফলে এই মুহূর্তে রীতিমতো আশঙ্কিত চিকিৎসক এবং রোগীরা। একদিকে যেমন বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তেমনি অন্যদিকে হাসপাতালে জল ঢুকে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিড আক্রান্তের পরিমাণ এমনিতেই যথেষ্ট বেশি। সেই কারণেই এখন প্রশাসনের পক্ষে কাজ হয়ে পড়েছে আরো কঠিন। অবশ্য জলনিকাশির বেহাল দশার কারণেই এভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সাগর এবং কাকদ্বীপ এমনটাই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।