বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে অন্যতম “লাইফ লাইন” হল ট্রেন। প্রতিটি শ্রেণির মানুষরাই ট্রেন যাত্রাকে পছন্দের তালিকায় রাখেন। দূরদূরান্তের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় ট্রেনের ভাড়াও অনেকটাই কম।
কিন্তু আপনি কি জানেন আমাদের দেশেও এমন একটি ট্রেন চলে, যেটিতে যাত্রীরা বিনা খরচে যাতায়াত করতে পারেন? হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এই ট্রেনটি চড়তে কোনো টিকিট লাগেনা। বর্তমান প্রতিবেদনে জেনে নিন ট্রেনটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ভারতের এই টিকিটবিহীন ট্রেনটি হিমাচল প্রদেশ থেকে পাঞ্জাব সীমান্তের মধ্যে চলাচল করে। তাই আপনি যদি ভাকরা-নাগাল ড্যাম দেখার পরিকল্পনা করেন সেক্ষত্রে আপনি সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারবেন। এই ট্রেনটি হিমাচল প্রদেশের ভাকরা বাঁধের কাছে অবস্থিত ভাকরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। গত ৭২ বছর ধরে পার্শ্ববর্তী ২৫ টি গ্রামের মানুষ বিনামূল্যে যাতায়াত করে আসছেন এই ট্রেনে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এই ট্রেনটি প্রথম ১৯৪৯ সালে চালানো হয়েছিল, যা বর্তমানে ৭৩ বছর পূর্ণ করেছে। এই ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন বিনামূল্যে ভ্রমণ করেন, যার মধ্যে অধিকাংশই থাকে স্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রী।
এই ট্রেনটির সমস্ত বগি কাঠের তৈরি। তাই, অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় এটিকে শনাক্ত করাও খুব সহজ। কাঠের তৈরি এই বিলাসবহুল ট্রেনের ইঞ্জিন চলে ডিজেলে, যা চালাতে প্রতিদিন ৫০ লিটার ডিজেল খরচ হয়। ট্রেনটির ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর এটি একটানা চলে, যা পাঞ্জাব সীমান্ত থেকে ভাকরায় ফিরে আসার পরই বন্ধ করা হয়।
ট্রেনটি ভাকরা বাঁধ হয়ে বারমালা, ওলিন্দা, নেহলা, হ্যান্ডোলা, স্বামীপুর, খেদা, বাগ, কালাকুন্ড, নাঙ্গল, সলংদি, লিডকোট এবং গোলথাইয়ের মতো দূরবর্তী গ্রামগুলির মধ্য দিয়ে যায়। ট্রেনে প্রথমে মোট ১০ টি বগি থাকলেও এখন এই বগির সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ৩।
এই ৩ টি বগির মধ্যে একটি কোচ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি, ট্রেনের একটি বগি পর্যটকদের জন্যও সংরক্ষিত করা হয়েছে, যাতে তাঁরা এই ট্রেনে আরামে বসে ভাকরা বাঁধের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এই ট্রেনে উঠতে ভাড়া লাগে না কেন? আসলে, এই ট্রেনটি বিনামূল্যে চালানোর মূল কারণ হল ভাকরা বাঁধ, যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। যেই কারণে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড (বিবিএমবি) এই ট্রেন চালানোর দায়িত্ব নেয় এবং পাহাড় কেটে রেলপথও তৈরি করা হয়।
দেশের তরুণদের কাছে ভাকরা বাঁধের তথ্য পৌঁছে দিতে ভাকরা থেকে বিনামূল্যে ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়, যা গত ৭৩ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ভাকরা বাঁধটি ১৯৬৩ সালে নির্মিত হয়েছিল, যা ২২৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এমতাবস্থায় বিবিএমবি’র কর্মকর্তারা চান, দেশের প্রতিটি নাগরিককে এই বাঁধের নির্মাণ, ইতিহাস ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্পর্কে সচেতন করতে।
এই কারণেই পাঞ্জাব বর্ডার থেকে ভাকরা ড্যাম পর্যন্ত চলা এই ট্রেনের ভাড়া রয়েছে একেবারে বিনামূল্যে। যেখানে পর্যটক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন। এমতাবস্থায়, আপনি যদি ভ্রমণপিপাসু হন, তাহলে অবশ্যই একবার ভাকরা ড্যাম ঘুরে আসুন এবং এই ট্রেনে ভ্রমণ উপভোগ করুন।