বাংলা হান্ট ডেস্ক: আরজি কর কান্ডের (RG Kar Case) রেশ ছড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সানফ্রান্সিসকো থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক বিভিন্ন দেশ কাদম্বিনীর প্রতিবাদে গর্জে উঠছে। তবে এবার বিদেশ থেকে নয়, জুনিয়র ডাক্তারদের সাথেই আন্দোলনে পা মিলিয়েছেন এক সাদা চামড়ার যুবক। যাকে আমরা গোদা বাংলায় বলি “বিদেশী”। তার গলাতেও শোনা গিয়েছে জাস্টিসের স্লোগান। তাঁর প্রতিবাদী সত্ত্বা দেখে মুগ্ধ গোটা বাংলাবাসী। সুদূর বেলজিয়ামে বাস করেন তিনি। হ্যাঁ তিনি হয়তো প্রথম থেকে আরজি কর আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তবে যেদিন থেকে যুক্ত হয়েছেন তার ছাপ স্পষ্ট।
আরজি কর (RG Kar Case) আন্দোলনের মুখ:
সেই ব্যক্তির নাম গোকান গুল। ভারত থেকে বহুদূরে বেলজিয়ামেই তাঁর বাস। তবে ভারতের বৈচিত্র্য, পাহাড়, পর্বত সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তিনি বড্ড ভালোবাসেন। সেই টানেই বারবার ছুটে আসেন ভারতে। জানা গিয়েছে, গোকানের বাবা-মা টার্কিশ। কর্মসূত্রে বেলজিয়ামে আসেন তারা। আর বেলজিয়ামে জন্ম হয় গোকানের। অর্থাৎ তিনি জন্মসূত্রে বেলজিয়ামবাসী হলেও, বংশসূত্রে তিনি টার্কিশ।
চোখে মুখে এক আলাদাই স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে, সাথে সর্বদা একগাল হাসি প্রস্তুত। যদিও গোকান পেশায় একজন অংকের শিক্ষক। রোগা ছিপছিপে, দাঁড়িওয়ালা ছেলেটির চোখে সে কি তেজ। চলতি মাসের ৯ অক্টোবর কলকাতাতে তাঁর আসা। যদিও তখন বঙ্গ জুড়ে চলছে দুর্গোৎসব। আর সেই উৎসবের আমেজ উপভোগ করতেই কলকাতাতে এসেছিলেন। যদিও ভারতে এসেছে আগস্টের মাঝামাঝি সময়। প্রথমে লেহ-লাদাখ যান, সেখানে সৌন্দর্য উপভোগ করে দিল্লি, সেখান থেকে মুম্বাই। আর তারপর বর্তমানে ডেস্টিনেশন কলকাতা।
যদিও তিনি যখন কলকাতাতে আসেন তখন জানতেন না বাংলায় এমন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আন্দোলন দেখে সকলের সাথে কথা বলেন। তখন জানতে পারেন, আর জি করের (RG Kar Case) এক মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। নরখাদকের হাতে বলি হয়েছে একটি নিষ্পাপ ফুলের প্রাণ। আর এমন ঘটনা শুনে তিনিও পিছিয়ে যেতে পারেননি। এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। কখনো অনশন মঞ্চে, আবার কখনো প্রতিবাদের মিছিলে হেঁটেছেন। শুধু তাই নয়, মশাল মিছিল থেকে শুরু করে শনিবারের গণ কনভেনশনেও দেখা যায় তাকে। কিন্তু কোথাও গিয়ে ক্ষুন্ন হয়েছেন সরকারের তৎপরতা দেখে।
আরও পড়ুন: IMF-এর লোনের পরেও হয়নি উন্নতি! গভীর সঙ্কটে কাঙাল পাকিস্তান, হাত পাততে হচ্ছে চিনের কাছে
তিনি জানিয়েছেন, তাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। আর ঘটলেও সেখানে প্রশাসন কড়াকড়ি ভাবে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এখানে প্রশাসন নয়, নিজেদের অধিকার আদায়ের দখলের লড়াইয়ে নেমেছেন সাধারণ জনগণেরা। আর তা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। গোকানের মতে, তিনি নিজের দেশে কিংবা অন্যান্য দেশেও এমন আন্দোলন এর আগে কখনো দেখেনি। তাই এমন আন্দোলন দেখে নিজের প্রতিবাদ সত্তাকে আটকে রাখতে পারেননি। তাই সাধারণের ভিড়ে তিনিও হেঁটেছেন।
আরও পড়ুন: চলতি বছরে ৩৫ বার “অল-টাইম হাই”-তে পৌঁছেছে সোনার দাম! কারণ জানলে উঠবেন চমকে
তবে আন্দোলনকারীদের বার্তা দিতেও তিনি ভোলেননি। তিনি বলেছেন, একতাই এই আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। একসাথে মিলে আন্দোলন করলে এই আন্দোলনের জয় হবেই। বাংলায় একটা কথা আছে, “দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ”। ঠিক এমনটাই বলেছেন তিনি। তবে হার নয় তিনি দেখতে চান এই লড়াইয়ের জয়। গোকান গুল কিন্তু বাংলা বোঝেন না, না বোঝাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনের ভাষা তিনি ঠিক বুঝেছেন। আর সেইসাথে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন, এখনো মানুষের মধ্যে থেকে মনুষত্ববোধ লুপ্ত হয়ে যায়নি।