বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেন সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘জ়েটেও’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস সংখ্যালঘু নিপীড়ন সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলেন, “এই সব কিছুই ভুয়ো খবর।” শুধু তাই নয়, তিনি ভারতের দিকে আঙুল তুলে বলেন, “ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব এখন ভুয়ো খবরে! গুচ্ছ গুচ্ছ ভুয়ো খবর।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে দুই দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা।
বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ইউনূসের দাবি
সাক্ষাৎকারে সঞ্চালক মেহদি হাসান ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘুদের, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও অত্যাচার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি উল্লেখ করেন, “গত নভেম্বরে প্রায় ৩০ হাজার হিন্দু আপনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হয়েছিলেন এবং তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।” এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হল, তা জানতে চান সঞ্চালক।
আরও পড়ুন: ৫৬ বছরের ইতিহাসে নতুন নজির! BSF-এর এয়ার উইংয়ের প্রথম মহিলা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হলেন ভাবনা চৌধুরী
উত্তরে ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, “এই সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো খবরের উপর ভিত্তি করে তৈরি। আপনি ভুয়ো খবরের দ্বারা পরিচালিত হতে পারেন না।” তাঁর দাবি, অনেক সময় বাংলাদেশে (Bangladesh) ব্যক্তিগত বা সামাজিক বিবাদকেই ধর্মীয় সংঘাত হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মেলে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “ধরুন আপনি আমার প্রতিবেশী। আপনি হিন্দু, আমি মুসলমান। আমাদের মধ্যে জমি বা সীমানা নিয়ে কোনও বিবাদ হলে কি সেটি ধর্মীয় সংঘাত বলা যায়? এটা আসলে সামাজিক সমস্যা, ধর্মীয় নয়।”
ইউনূস আরও বলেন, “অনেক সময় পারিবারিক বা জমি সংক্রান্ত বিবাদের ঘটনাকে হিন্দু-মুসলমান সংঘাত হিসেবে দেখানো হয়, যা সত্য নয়।” তাঁর বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বর্তমান সরকার অত্যন্ত সতর্ক। তিনি দাবি করেন, তাঁর সরকার দেশের (Bangladesh) সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাক্ষাৎকারে ইউনূস বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি তাঁদের বলেছি, কখনও বলবেন না যে আমি হিন্দু, তাই আমাকে রক্ষা করুন। বরং বলবেন, আমি এই দেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে আপনাদের যথাসম্ভব সুরক্ষা আমি দেব।”
আরও পড়ুন:চাকরি ছেড়ে শুরু অভিনব ব্যবসা, আজ মিলছে ৪ কোটির টার্নওভার, কীভাবে বাজিমাত করলেন সুরেন্দ্র?
৩৫ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস একাধিকবার জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশ (Bangladesh) এমন একটি দেশ যেখানে সবাই সমান। ধর্ম, জাতি বা পরিচয়ের ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে বৈষম্য বরদাস্ত করা হবে না।” তবে তাঁর এই বক্তব্যে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা বাস্তব পরিস্থিতিকে আড়াল করার প্রচেষ্টা হতে পারে। অন্যদিকে, ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, ভুয়ো খবর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারের বিরুদ্ধেই লড়ছেন তিনি।
বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন বারবার উঠছে, সেই প্রেক্ষিতে ইউনূসের এই বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।