বাংলা হান্ট ডেস্ক: আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে দেশে প্রায় ৩০ টি কয়লা খনি (Cold Mines) বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ কিছু উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর ফলে বন কিংবা জলাশয়ের জন্য জায়গা মিলবে। পাশাপাশি আমদানিকৃত কয়লার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। অর্থাৎ কয়েক বছরের মধ্যে এসব জমিতে সবুজের সমাহার ও জলাশয় দেখা যাবে। এদিকে, দেশে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় কয়লা সচিব অমৃত লাল মীনা গত সোমবার মুম্বাইতে চলমান G20 শীর্ষ সম্মেলনের অবসরে এই তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ডি-কয়েলিং বা কয়লা-খনি বন্ধ করা অবশ্যই পরিবেশের ওপর ভালো প্রভাব ফেলবে। কিন্তু এতে জনগণের কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত ৫০ লক্ষ মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদিও, তিনি বলেন যে তাঁদের জীবিকা যাতে খুব বেশি প্রভাবিত না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, কয়লা খনি বন্ধ করে সেই জমি ছাই দিয়ে ভরাট করে গাছ লাগানো হচ্ছে। পাশাপাশি, কৃষিজমি, জলাশয় ও সোলার প্ল্যান্ট তৈরি করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে জায়গাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আনুমানিক ২ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি জমির মধ্যে প্রায় ২০,০০০ হেক্টর জমি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, প্রতি বছর ৫০০ হেক্টর জমি পরিবেশগতভাবে ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ করা হবে। উল্লেখ্য যে, কয়লা খনি গড়ে ২৫ থেকে ৩০ বছর স্থায়ী হয়।
মীনা আরও জানান, কোল ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলি যারা কয়লা খননের ব্যবসায় রয়েছে তারা খনির কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহার করে শূন্য কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা হাসিল করার জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে ৫,২০০ টি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে।
এদিকে, বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৭৫ শতাংশ এখনও থার্মাল ভাবে উপলব্ধ হচ্ছে জানিয়ে মীনা বলেছেন ২০২৩ অর্থবর্ষে ব্যবহৃত ৮৯২ মিলিয়ন টন কয়লার বর্তমান পরিমাণ ২০২৪ সালের মধ্যে ১.১ বিলিয়ন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বেশি হবে। বর্তমানে মোট ৮৯২ মিলিয়ন টন কয়লার মধ্যে প্রায় ২২০ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, এই আমদানির মধ্যে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন টন কয়লা দেশীয় কয়লা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে। এটি দেশটিকে কয়লা আমদানিতে ৩ লক্ষ কোটি টাকার বর্তমান ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে।
মীনা বলেন যে, আমাদের দেশ কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ এমনভাবে বাড়ছে যে, ২০২৬ সালের মধ্যে নেপাল ও বাংলাদেশের মতো দেশেও রপ্তানির জন্য আমাদের কাছে অতিরিক্ত কয়লা থাকবে। মীনার মতে, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৮৭ টি খনি কমার্শিয়াল লিজ নেওয়ার জন্য প্রায় ১,০১২ মিলিয়ন টন কয়লা যুক্ত হবে। এছাড়াও, তিনি বলেছেন যে কয়লা খননের পরিমাণ বর্তমান ৭৫ শতাংশ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে হ্রাস পেয়ে ৩১ শতাংশ হবে। এদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে বেসরকারি খনির কোম্পানির অবদান ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।