অসমের মুসলিমদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ফের বিতর্ক বাড়ার আশঙ্কা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বর্তমান ভারত সরকার কি সাম্প্রদায়িক? এনআরসি (NRC) প্রয়োগ করে কি মুসলিমদের (Muslims) দেশ থেকে তাড়াতে চায়? এই জাতীয় প্রশ্নে প্রায়শই বিদ্ধ হয় বিজেপি। এবার সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটলো অসমের বিজেপি (BJP) সরকার। প্রায় চল্লিশ লক্ষ অসমীয়া ভাষী মুসলমানকে ‘ভূমিপুত্র’ মর্যাদা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এই বিষয়ে মঙ্গলবার আইনও পাশ হয়ে গেল অসমের মন্ত্রিসভায়। রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ও অধিকার নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হলো। তবে, বিশ্লেষকদের একাংশের অভিযোগ, ভাষার ভিত্তিতে অসমের মুসলিম সমাজে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি।

কারা পেলেন ভূমিপুত্রের মর্যাদা? মঙ্গলবার অসমের পাঁচটি মুসলিম জনগোষ্ঠী–গোরিয়া, মোরিয়া, জোলা, দেশি ও সৈয়দ-কে ভূমিপুত্রের মর্যাদা দিলো অসমের (Assam) বিজেপি সরকার। মঙ্গলবার ট্যুইট করে এই জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজেই। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, ‘এই সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অনেকগুলি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী ও সেনাকর্মীদের বিধবাদের জন্য প্রপার্টি ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া, পুরোন গাড়ি বাতিল এবং পাঁচটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভূমিপুত্রের তকমা দেওয়া বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ভূমিপুত্রের মর্যাদা পাওয়ায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক স্বকীয় পরিচয় রক্ষার পথ আরও সুগম হবে বলেই মনে করেন তিনি।

অসম সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অসম সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের আবেদনের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ করছে সরকার। এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তাদের জন্য রয়েছে একাধিক সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প, রয়েছে আলাদা দপ্তরও। এবার সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যাবে সংখ্যালঘুদের দুয়ারে। এই সিদ্ধান্তের জন্য সাধুবাদ উঠে আসছে অনেক মহল থেকেই। গোরিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হাফিজউল আহমেদ বলেন, ‘সেই ২০০৬ সাল থেকে আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি পৃথক শ্রেণিভাগের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আমরা বাংলাভাষী মুসলমানদের চাপে হারিয়েই যাচ্ছিলাম। আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ অসম সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে উপকৃত হবেন পাঁচ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ লক্ষ অসমীয়া ভাষী মুসলমানরা। অসম সরকার দাবি করছে, এদের পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ‘অনুপ্রবেশ’ করেছে তার কোনও প্রমাণ নেই।

মুসলিম ঐক্যে ভাঙন ধরাচ্ছে বিজেপি? তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উঠে আসছে নানান বিতর্কও। বিরোধীদের মতে, অসমের মুসলিম সমাজের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। তাঁদের বক্তব্য, অসমের বেশিরভাগ মুসলিম বাসিন্দাই বাংলাভাষী। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। এদের অনেকেই দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে থেকেই অসমে বাস করেন। কিন্তু শুধুমাত্র অসমীয়া ভাষী মুসলিমদের ভূমিপুত্রের মর্যাদা দিয়ে দিয়ে মুসলিম ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে বিজেপি।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর