বাংলা হান্ট ডেস্ক : অবশেষে মুক্তি! মাওবাদী তকমা উড়িয়ে ১৩ বছর পর বেকসুর খালাস পেলেন নন্দীগ্রাম (Nandigram) জমি রক্ষা আন্দোলনের চারণ কবি মধুসূদন মণ্ডল ওরফে নারায়ণ। শুধু তিনিই নন, তাঁর সঙ্গে মুক্তি পেলেন শচীন ঘোষাল, রাধেশ্যাম দাস, সিদ্ধার্থ মণ্ডল, সঞ্জয় মণ্ডল, দেবলীনা চক্রবর্তী। গতকাল মঙ্গলবার আলিপুর আদালত এই রায় দিয়েছে।
২০০৭ সালে বাম শাসনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা স্পেশ্যাল ইকনোমিক জোন তৈরির উদ্দেশ্যে নন্দীগ্রামের ২৭টি ও খেজুরির ২ মৌজা অধিগ্রহণের করার নির্দেশ জারি করে সরকার। তারপরই সৃষ্টি হয় নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। মাঠে নামেন নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষ। হলদিয়া থেকে সেই জমি রক্ষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীর ভূমিকা নেন মধুসূদন মণ্ডল। গান লিখে এবং গ্রামের পথে গান গেয়ে চারণ কবি হিসেবে আন্দোলনকারীদের তিনি উদ্বুদ্ধ করা শুরু করেন। এই আন্দোলনের সময়ই সোনাচূড়া এলাকায় মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করে মহিলাদের সাহস দিতে উদ্যোগী হয় কলকাতার দেবলীনা চক্রবর্তী। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের একজোট করে একটি সমিতি গড়ে আন্দোলন করতে মাঠে নামেন খেজুরির রাধেশ্যাম দাস,সিদ্ধার্থ মণ্ডল।
মধুসূদনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার অভিযোগ ওঠে বাগনানের শচীন ঘোষাল, ডায়মন্ড হারবারের সঞ্জয় মণ্ডল এবং মধুসূদনেরই আত্মীয় রাজেশ মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তাঁদের সবাইকে মাওবাদী তকমা দিয়ে ২০১০ সালের ২৭ জুন গ্রেফতার করে রাজ্যের পুলিস। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এরপর থেকেই বিচার বিভাগীয় হেফাজতে জীবন কাটান অভিযুক্তরা। রাজেশ সেই সময় ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। ২০১১ সালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাকি অভিযুক্তদের বিচার বিভাগীয় হেফাজত চলতেই থাকে। ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর শর্তাধীন জামিন দেওয়া হয় সিদ্ধার্থ বাদে বাকি ৫ জনকে। মামলার সম্পূর্ণ নিষ্পত্তির জেদ চেপে যায় সিদ্ধার্থের। তিনি থেকে গেলেন জেলেই। আদালত নির্দেশ দেয় জামিনে মুক্ত বাকি পাঁচ ব্যাক্তি নিজের থানা এলাকার বাইরে একটিও রাত কাটাতে পারবেন না।
আদালতের নির্দেশ মেনেই জীবন কাটাচ্ছিলেন ওই ৫জন। এরপর আসে সুখবর। উপযুক্ত তথ্য-প্রমানের অভাবে মঙ্গলবার সেই মামলার নিষ্পত্তি ঘোষণা করে আলিপুর আদালত। এদিন মিথ্যা মামলার জন্য বাম সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মধুসূদন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে সেরা সময় নষ্ট করে দিয়েছে রাজ্যের বাম সরকার। সিপিএমের নেতারা আমার সব জীবন-যৌবন কেড়ে নিয়ে আজ আমাকে মাওবাদী তকমা দিয়ে সর্বনাশ করেছে। আর তা করতে গিয়েই ওরাও শেষ হয়ে গিয়েছে বাংলার মাটিতে। মানুষ ওদের চালাকি কোনওদিন ভুলবে না। তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা ছিল। তাই ১৩ বছর পর বেকসুর খালাস হলাম।’