বাংলা হান্ট ডেস্ক : বিগত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha elections) গড়িয়ে গেলেও, ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে এখনো ২০০৩ সালকে বেস ইয়ার হিসেবে ধরার সিদ্ধান্তে বিস্মিত পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল। মঙ্গলবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন তোলে—“ভোট তো হয়েছে ২০২৪-এ, তাহলে ২০০৩ কেন?”

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Bandapadhyay) বলেন, “২০০৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যারা ভোটার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের নাম কেমন করে বাদ যাবে? এটা তো আইনবিরুদ্ধ!” নির্বাচন কমিশন যদিও তৃণমূলের (Trinamool Congress) দাবির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে।
নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ফাঁদ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছেন, বিহারে যেমন ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে এনআরসি-সদৃশ পদ্ধতি চালু হয়েছে, তেমনই বাংলায়ও সেই পথে হাঁটতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭-র পরে, তাঁদের ভোটার তালিকায় থাকার জন্য বাবা-মায়ের জন্মস্থান প্রমাণপত্র দিতে হবে—এই নিয়মকে ‘নাৎসি যুগের অ্যানসেস্টর পাস’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের মুখোমুখি তৃণমূল
পাঁচ সদস্যের তৃণমূল প্রতিনিধি দল—কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস ও প্রকাশ চিক বরা—নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভোটার প্রভাব, ভোটার টার্নআউট ডেটা প্রকাশে দেরি—সবই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
হাকিম বলেন, “ভোট ঘোষণা হওয়ার পরে রাজ্যপাল যেন বিজেপি ঘাঁটি এলাকায় ঘুরে বেড়াতে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও কমিশনের নেওয়া উচিত।”
কারা বাদ, কারা অন্তর্ভুক্ত?
ভোটার তালিকা সংশোধনে কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নতুন করে নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে ভোটাধিকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বর্তমানে তালিকায় থাকা বহু ৫০-৬০ বছর বয়সীদের নাম হঠাৎ করে কীভাবে যুক্ত হয়েছে?
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৮ থেকে ২১ বছর বয়সীদের নতুনভাবে তালিকায় নেওয়া নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু পুরনো তালিকা থেকে অনৈতিকভাবে নাম বাদ দেওয়া বা যুক্ত করাকে আমরা মেনে নিতে পারি না।”
আরও পড়ুন : কসবা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ‘ভাইপো গ্যাং’-এর সদস্য! এবার সরাসরি অভিযোগ শুভেন্দুর
তৃণমূলের হুঁশিয়ারি
এখনই নিজেদের ‘ব্যাটিং’ শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, “আমি অন্য রাজ্যগুলিকেও বলব, আপনারাও বল করুন। আমরা শুরু করে দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেখানে নানা প্রশ্ন উঠছে, সেখানে বাংলার রাজনীতিতে এই ইস্যু নতুন উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
এই ঘটনার পরবর্তী ধাপে কী হবে? সত্যিই কি বাংলায় এনআরসি ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে? না কি এটা শুধুই রাজনৈতিক কৌশল? সময়ই বলবে।