বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে বেড়েই চলেছে কোভিড। প্রতিদিনই মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন শতাধিক মানুষ। চিকিৎসকের অভাবও যথেষ্ট স্পষ্ট রাজ্যজুড়ে। প্রায় ১৩৩০ রোগীর পেছনে রয়েছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। অন্য কোন ক্ষেত্র হলে হয়তো এক্ষেত্রে ছোটখাট ভুল বোধহয় খুব একটা দোষের হত না। কিন্তু একটা ছোট্ট সার্টিফিকেটের মাধ্যমে যদি জীবিত মানুষ হয়ে যায় মৃত। তাহলে সেই ভুল হয়ে ওঠে ক্ষমার অযোগ্য। এবার এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো কল্যাণীর সরকারি হাসপাতালে। শারীরিক অসুস্থতার জেরে গত ১০ মে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৭ সুব্রত কর্মকারকে। ১৩ মে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসায় নাদিয়ার কল্যাণী কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে।
এর পরেই ১৪মে ঘটে দুর্ঘটনা হাসপাতালের তরফে ফোন করে সুব্রত পরিবারকে জানানো হয় কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। ২৭ বছরের এই তরুণের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে পরিবারটি। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সুব্রতর বাবা। সেখান থেকে ছেলের ডেথ সার্টিফিকেটও সংগ্রহ করেন তিনি। এই ডেথ সার্টিফিকেটেও রয়েছে আর একটি মর্মান্তিক ঘটনার উল্লেখ।
মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে মৃতদেহ সংগ্রহ করতে আসা সুব্রতর বাবাকেও। সত্যরঞ্জন কর্মকারের নামের আগে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে “late” শব্দটি। যাইহোক অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার আগে শেষবারের মত ছেলেকে দেখবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন বাবা। প্রথমত দুপুর থেকে সন্ধ্যা ছয়টা অবদি অপেক্ষা করতে হয় তাকে। সত্যরঞ্জনের কথায়, হাসপাতাল থেকে জানানো হয় ডোম আসে সন্ধ্যে ছটার পর। তাই তার আগে দেখার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
ছটার সময় ডোম আসতেই শুরু হয় আসল ঘটনা। সত্যরঞ্জনকে পর পর দুটি মৃতদেহ দেখানো হয় সুব্রতর বলে। সনাক্ত করতে গিয়ে দুটি মৃতদেহই সুব্রতর নয় বলে চিহ্নিত করেন তিনি। এরপরেই সন্দেহ হয় ডোমের মনেও। কোভিড ওয়ার্ডে গিয়ে সুব্রত নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে সত্যরঞ্জন জানান, ডোম কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করতেই এই যে আমি সুব্রত বলে সাড়া দেন রোগী। এরপর আর অপেক্ষা করেননি সত্যরঞ্জন। নিজের তরফ থেকে মুচলেকা দিয়ে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যান তিনি। সিদ্ধান্ত নেন হোম আইসোলেশনেই ছেলেকে রাখবেন তিনি।
ধানতলার হিজুলী এলাকার বাসিন্দা সুব্রত কর্মকারের এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।যদিও ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি কল্যাণী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কল্যাণীর মহকুমা শাসক জানিয়েছেন বিষয়টি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজন জীবিত রোগীকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সম্ভব তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ন্যূনতম একবার না দেখেই কিভাবে তার নামে জারি করে দেওয়া হল ডেথ সার্টিফিকেট? কদিন আগেই হাসপাতালে পচা-গলা করোনা মৃতদেহ পাওয়ারও খবর উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। এমনকি হাসপাতালের কার্নিশেও পাওয়া গিয়েছিল করোনার মৃত দেহ। বারবার কেন এই ধরনের চূড়ান্ত অব্যবস্থা, তা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখোমুখি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের।