বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের একবার রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলো নারোদা স্টিং অপারেশন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই নারোদা কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের করা একটি স্টিং ফুটেজ সকলের সামনে আসে। যেখানে দেখা যায় টাকা নিচ্ছেন তৎকালীন তৃণমূলের একাধিক তাবড় তাবড় নেতা। যাদের মধ্যে ছিলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম বর্তমানে বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী আরো অনেকেই। সে সময় নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছিল বিজেপিও। পরবর্তী ক্ষেত্রে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে তৃণমূলকে। জেলে গিয়েছেন মদন মিত্রের মতো পরিচিত তৃণমূল নেতারা। তবে তেমনভাবে তার কোন বিচার হয়নি। এ দিন ফের একবার এই স্টিং অপারেশন ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। কারণ রাজ্যের পরপর চার হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। তাদের মধ্যে রয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
যদিও আশ্চর্যভাবে সিবিআই গ্রেপ্তার করেনি মুকুল রায় কিম্বা শুভেন্দু অধিকারীকে। এদিনে নিয়ে মুখ খুললেন নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলও। বিচার পেতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল এই আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “বিচার পেতে অনেকটা সময় লেগে গেল। কিন্তু, দেরি হলেও বিচার হয়েছে। আজ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে শুভেন্দু অধিকারীও তো আমার থেকে টাকা নিয়েছেন। সেটা রেকর্ড করাও হয়েছে। তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করা হল না কেন? সবার জন্যই এক বিচার হওয়া দরকার।” এ বিষয়ে শুরু থেকেই অবশ্য বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকেই সামনে আনতে চাইছে তৃণমূল। তাদের মতে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে পারেনি বিজেপি। আর সেই কারণেই প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকেই এ ধরনের একের পর এক কাজ করে চলেছে তারা। এদিন একদিকে যেমন গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পরেই নাটকীয় ভাবে নিজাম প্যালেসে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেমনি সরব অন্যান্য তৃণমূল নেতারাও। গ্রেফতারির অনুমোদন দেওয়ার জন্য রাজ্যপালের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, রাজ্যপালের এভাবে গ্রেপ্তারির অনুমোদন দেওয়া অবৈধ। সাথে সাথে এ দিন মুকুল রায় কে কেন গ্রেফতার করা হলো না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “রাজ্যপাল একটা দৈত্য, রক্ত খেকো বাঘ।”
স্বামীর গ্রেপ্তারিতে পাশে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছেন শোভন পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়ও। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ। ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি। তাই এসব করছে। নোটিশ ছাড়া কাউকে আনতে পারেনা।”
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ও এরমধ্যে বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণকেই মুখ্য মনে করেছেন। তিনি জানান, রাজ্যপাল কেন চার্জশিট প্রসঙ্গে অনুমতি দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আদালতে এর মোকাবিলা করা হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই গ্রেফতার করা হয়েছে দুই মন্ত্রীসহ বিধায়ক মদন মিত্রকে। এমনটা মনে করছেন তৃণমূল নেতা তাপস রায়ও। একথা ঠিক যে দোষীর শাস্তি চায় আমজনতাও। পদে বসে টাকা নেওয়া প্রভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে ফের একবার সামনে আসছে রবীন্দ্রনাথের সেই লাইন, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। বিচার সকলের জন্য এক। আর সেক্ষেত্রে মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি সিবিআই-এর এই অনুকম্পা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে এই ঘটনা যে বড় প্রভাব ফেলবে আগামী দিনের রাজনৈতিক চিত্রে। তা বোঝা গেল প্রথম দিনেই। এখন প্রশ্ন উঠছে শাস্তি পাবেন কি প্রত্যেক দোষী? নাকি গঙ্গা দিয়ে বয়ে যাবে আরো অনেক জল?