অতিমারীর সুযোগে রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা, তিন বেসরকারি হসপিটালকে বড় ঝটকা দিল কমিশন

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন আরো বেশি ভয়ানক হয়ে উঠছে কোভিড পরিস্থিতি। গোটা দেশজুড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ। তখন আক্রান্তদের কাছে এখন ভগবান চিকিৎসকরাই। কিন্তু মহামারীর এই পরিস্থিতিকেই ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে বদ্ধপরিকর কিছু হাসপাতাল। একদিকে যেমন চলছে অক্সিজেনের কালোবাজারি, চলছে বেড নিয়ে হাহাকার। তখনই বেশকিছু হাসপাতাল এর মধ্যে দেখছে বিপুল লাভের সুযোগ। রোগী মরলো কি বাঁচলো তাতে কিছুই যেন এসে যায়না হাসপাতাল কর্তাদের। তাদের কাছে বড় কথা হলো ঠিকমত পেমেন্ট হল কিনা? নাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হবে মৃতদেহ। একান্তই টাকা না পেলে পরিবাবের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

একদিকে যখন অজানা এই রোগের মহামারীতে রীতিমতো নাজেহাল মানুষ, সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে বিধ্বস্ত কিছু চিকিৎসক। তখনই অন্যদিকে বেশ কিছু অসাধু চক্রের হাতে পড়ে প্রতিদিন ধনে প্রাণে শেষ হচ্ছেন রোগীর আত্মীয় পরিজনরা। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার জন্য বিল করা হচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা। একে পরিবারের প্রিয় আত্মীয়কে হারানোর বেদনা, তার উপর মাথায় এই বিপুল ঋণের বোঝা। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ও দেখা গিয়েছিল একই ছবি। শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল আদালতকে। এবার আরও একবার সামনে এগিয়ে এল রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।

কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বেহালার অ্যাপেক্স হাসপাতাল, পার্ক সার্কাসের গুড সামারিটান হাসপাতাল এবং নিউটাউনের উজ্জীবন হাসপাতালে কোভিড রোগীদের ভর্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। জানা গিয়েছে, রোগীদের বিলের ক্ষেত্রে বড়োসড়ো কারচুপি করেছে এই তিন হাসপাতাল। তাই নয় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিতেও অস্বীকার করেছে তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তিন হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেই অভিযোগ এসেছিল বহুবার। অতিমারীর সুযোগে ব্যবসা গুছিয়ে নেওয়ার কাজে নাম লিখিয়েছে হাসপাতালগুলি। সেই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতেই এবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করলো কমিশন। তার জেরেই এই মুহূর্তে আর কোভিড রোগী ভর্তি নিতে পারবেনা হাসপাতালগুলি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এর আগেও নিজের ফেসবুক লাইভে, হাসপাতালে এধরনের অসাধু চক্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। কোন হাসপাতালে নাম না নিলেও তিনি বলেছিলেন অনেক ক্ষেত্রেই মারাত্মক বেশি বিল করা হচ্ছে। এবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেইসব হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করলো কমিশন। অসীম বাবু আরো জানিয়েছেন সোমবার থেকেই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে হাসপাতাল গুলিকে। গত এক মাসে এই হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি হয়েছে? তাদের কত টাকা বিল করা হয়েছে এবং তা কেন করা হয়েছে? প্রতি ক্ষেত্রেই কারণ দর্শাতে হবে তাদের। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আগামী দিনে হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

এর আগেই প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্য নির্দেশ নামা বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, করোনার আগে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালের বেড ভাড়া যা ছিল তার থেকে এক টাকাও বেশি নিতে পারবেনা হাসপাতালগুলি। প্রতিদিন হাজার টাকার বেশি বেড ভাড়া হিসেবে নেওয়া যাবে না। ক্রিটিক্যাল কেয়ারের ক্ষেত্রে চিকিৎসক যদি একাধিক বার রোগীকে দেখতে চান তার জন্য কেবল মাত্র এক হাজার টাকাই অতিরিক্ত পাবেন তিনি। রোগীর ওষুধ, তুলো সমস্ত কিছুর জন্য হাসপাতালকে অন্তত ১০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। প্রত্যেক হাসপাতালের সামনে একাধিক জায়গায় খরচের সমস্ত তালিকা, বেড ভাড়া ও অন্যান্য খরচ ডিসপ্লে বোর্ডে লাগিয়ে রাখতে হবে। যাতে পরে রোগীর আত্মীয়স্বজনদের বিপদে না পড়তে হয়।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তারপরও চলছে কারচুপি। মহামারীর নামে রোগীর পরিবারকে ধনে প্রাণে শেষ করছে হাসপাতালগুলি। আর সেই কারণেই এবার এ বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করল রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। এখন আগামী দিনে এই ব্যবস্থায় হাসপাতালগুলি কতটা সচেতন হয় সে দিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর