বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ফের একবার গণিতশাস্ত্রে অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করল ভারত। এর আগেই বিশ্বকে রামানুজন সহ একাধিক অসামান্য গণিতবিদ উপহার দিয়েছে ভারত। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো হায়দ্রাবাদের শ্রীনিধি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-র গাণিতিক পদার্থবিদ কুমার ঈশ্বরনের (Kumar Iswaran) নাম। গণিতে “রাইম্যান হাইপোথিসিস” (Riemann Hypothesis) এমন এক জটিল সমস্যা যা গত ১৬১ বছর ধরে সমাধান করতে পারেননি কেউই। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বের অনেক গণিতজ্ঞই মনে করতেন হাজার বছরেও এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আর তাই ২০০০ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লে ম্যাথমেটিক্স ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছিল, যিনি এই রাইম্যান হাইপোথিসিস সমাধান করতে পারবেন তাকে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ ডলার আর্থিক পুরস্কার।
কী এই রাইম্যান হাইপোথিসিস?
১৮৫৯ সালে জার্মান গণিতজ্ঞ ব্রেনহার্ড রাইম্যান মৌলিক সংখ্যা গুলিকে নিয়ে একটি হাইপোথিসিসের জন্ম দেন। এই পূর্বাভাস অনুযায়ী ১ থেকে ১০০ কোটি বা ১ হাজার কোটি অবধি মৌলিক সংখ্যা কতগুলি তা খুব সহজেই গণনা করা যেতে পারে। কিন্তু রাইম্যান শুধুমাত্র পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। গত ১৬১ বছর ধরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি কেউই। অবশেষে এই হাইপোথিসিস কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মিলেনিয়াম পুরস্কারের’ তালিকাভুক্ত হয়। অর্থাৎ ধরে নেওয়া হয়, এই সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব। মৌলিক সংখ্যা হল সেই সংখ্যা যাকে ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ভাগ করা যায় না। বাকি সংখ্যাগুলিকে আমরা বলি যৌগিক। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত কতগুলি মৌলিক সংখ্যা আছে, তা বলা সহজ। কিন্তু ১ থেকে ১০ লক্ষ বা ১০০০ কোটিতে কতগুলি মৌলিক সংখ্যা আছে তা বলা প্রায় অসম্ভব ছিল এতদিন। এবার তারই সহজ সমাধান করলেন হায়দ্রাবাদের গণিতজ্ঞ কুমার ঈশ্বরন।
মনোনয়ন দেয়নি আন্তর্জাতিক পত্রিকাঃ
১৬১ বছরের এই সমস্যা সমাধান করার পরে আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক পত্রিকা পিয়ার-এ গবেষণাপত্রটি রিভিউয়ের জন্য পাঠান ঈশ্বরন। কিন্তু তার ‘দ্য ফাইনাল অ্যান্ড এগজস্টিভ প্রুফ অব দ্য রাইম্যান হাইপোথিসিস ফ্রম ফার্স্ট প্রিন্সিপালস’ শীর্ষক গবেষণা পত্রটি মনোনীত করেননি ওই পত্রিকা। ফলত নেটমাধ্যমে কার্যত অবহেলায় পড়েছিল কুমার ঈশ্বরনের এতদিনের পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু হঠাৎই হাজার হাজার ডাউনলোড হতে শুরু করায় সকলের দৃষ্টি ফের একবার আকর্ষণ করে এই গবেষণাপত্র।
স্বীকৃতি দিল মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
গবেষণা পত্রটি এত পরিমাণে ডাউনলোড হচ্ছে দেখে তা নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। আট জন গণিতজ্ঞ এবং পদার্থবিদদের বিশেষজ্ঞ কমিটি শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয় ঈশ্বরনের গবেষণাপত্রকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ এস সীতারামনও। তিনি জানান, “বিশেষজ্ঞদের সেই কমিটি সকলের মতামত বিচার করে জানিয়েছে, ইশ্বরনের গবেষণাপত্র সঠিক।” যার জেরে অবশেষে প্রমাণিত হলো রাইম্যান হাইপোথিসিস। গত ২৮ জুন অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখলো কুমার ঈশ্বরনের সারা জীবনের গবেষণা।