বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: বীরেন কুমার বসাক, নামটা এতদিনে পরিচিত হয়ে উঠেছে দেশের সকলের কাছে। কিছুদিন আগে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য দেওয়া সবচেয়ে বড় সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন বীরেনবাবু। তার বানানো তাঁতের শাড়ির প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পেরে এবং পদ্মশ্রী পেয়ে আপ্লুত বীরেন বাবুও। কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছানো টা তার কাছে খুব একটা সহজ ছিল না।
বংশানুক্রমে বীরেন বাবুর পরিবার তাঁতীর কাজ করে আসছেন। তবে তাঁতী হওয়ার পাশাপাশি তার বাবা ছিলেন টাঙ্গাইলের এক বিখ্যাত লোক কবিও। ১৯৫০ সাল নাগাদ পালাগান করে তিনি একরাতে ১০ টাকাও রোজগার করতেন যা তখনকার হিসাবে বিশাল না হলেও জীবন চালানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল। তখন একজোড়া শাড়ি বুনে তার পরিবারের রোজগার হত মাত্র ২টাকা! এহেন বাবার সন্তান বীরেন কুমার বসাক ১৯৫১ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিল মোট চার ভাই ও দুই বোন, যাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট।
বীরেন টাঙ্গাইলেরই শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি বীরেন সেখানকার এক পণ্ডিতের কাছে গান শিখতেন। বাবার মতোই তারও গানে ছিল প্রবল উৎসাহ।
ঈশ্বরে বিশ্বাসী বীরেন এমনিতে ছিলেন ধৈর্যবান ও শান্ত। এরপর ১৯৬২ সালে তার পরিবার এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পরিবার সহ টাঙ্গাইল থেকে পশ্চিমবঙ্গের ফুলিয়ায় চলে আসেন। আর্থিক সমস্যার কারণে বীরেন বাবু আর পড়াশোনা করতে পারেননি। ভারতে এসে তিনি এক কারখানায় কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের রক্ত তাকে তা চালিয়ে যেতে দেয়নি। এরপর তিনি চলে আসেন কলকাতায়।
কলকাতার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে শুরু করেন নিজের পৈতৃক ব্যবসা। সুদিনের মুখ সহজে দেখেননি। তবে ধীরে ধীরে ব্যবসার উন্নতি ঘটেছে। তার কাছে তাঁত শিল্পের মাধ্যমে শাড়ি বানানো যেন শুধু জীবিকা নির্বাহের উপায় ছিল না, তা ছিল নিজের সংস্কৃতিকে নিজের মতো করে প্রকাশ করার একটা উপায়। নানান লোকসংস্কৃতির গল্প, রামায়ন, মহাভারতের ছোটখাটো নানান বিষয় ফুটে উঠেছে তার তাঁত শিল্পে।
তাঁর হাত ধরেই এখন বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে ফুলিয়ার তাঁতশিল্প। ফুলিয়ার তাঁতের বিশ্বায়নে তাঁর অবদানের অবশেষে স্বীকৃতি পেয়েছেন বীরেন কুমার বসাক। প্রতিভা কোনওদিনই চাপা থাকে না। এক না একসময় তার কদর সকলেই করেন।পদ্মশ্রী হাতে পেয়ে নিশ্চয়ই তা উপলব্ধি করেছেন ৭০ বছর বয়সী বীরেন কুমার বসাক।