গরিবদের জন্য ৩০ কোটি টাকা দান! মানবিকতার অনন্য নজির তামিলনাড়ুর ৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যখন মানবিকতা এবং মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ঠিক তখনই এমন কিছু কিছু ঘটনা সামনে এসে উপস্থিত হয় যা খুলে দেয় নতুন দিগন্ত। পাশাপাশি, মানুষকেও তা ভাবতে শেখায় নতুন করে। সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে যে সবার প্রথমে মানবিকতার জয়গানই প্রাধান্য পায় তা যেন বারেবারে প্রমাণিত হয় ঘটনাগুলি থেকে।

বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেইরকমই এক মহান মানুষের কর্মকান্ডের কথা আপনাদের জানাবো। যিনি বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও হয়ে উঠেছেন এক মূর্ত প্রতীক। প্রথম দেখায় পালাম কল্যাণসুন্দরমকে দেখলেই নিশ্চিতরূপে আপনার নিজের ঠাকুর্দার কথা মনে হবে। অনাড়ম্বর জীবন, সাধারণ চালচলন, মিতভাষী এবং অত্যন্ত মহানুভব এই মানুষ আজ সকলের কাছেই “আইকন” হয়ে উঠেছেন।

পাশাপাশি, মানবসেবার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির গড়ে তুলেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত তিনি তাঁর সম্মান ও প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ থেকে ৩০ কোটি টাকা দান করেছেন৷ যা সকলের কাছেই এক অবাক করার মত বিষয়। তামিলনাড়ুর থিরুনেলভেলি জেলার মেলাকারিভেলামকুলামে জন্মগ্রহণকারী কল্যাণসুন্দরম খুব অল্প বয়সেই তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। মূলত তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকেই দরিদ্রদের সেবা করার অনুপ্রেরণা পান।

কল্যাণসুন্দরম লাইব্রেরি সায়েন্সে স্বর্ণপদক বিজয়ী, এছাড়াও তিনি সাহিত্য ও ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শ্রীবৈকুন্তমের কুমারকুরুপাড়া আর্টস কলেজে তাঁর ৩৫ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে, তিনি স্বেচ্ছায় মাসের পর মাস তাঁর বেতন মানবসেবায় দান করেছেন। এমনকি, নিজের যৎসামান্য খরচের কারণে অবসর নেওয়ার পরে, তিনি একটি হোটেলে ওয়েটার হিসাবেও কাজ করেছেন।

এদিকে, জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে বিবাহও করেননি তিনি। পাশাপাশি, তাঁর এই মহান কাজের জন্য জন্য তিনি যথেষ্ট পুরস্কৃত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে ভারতের সেরা গ্রন্থাগারিক হিসাবে সম্মানিত করে। এছাড়াও, ইন্টারন্যাশনাল বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার, কেমব্রিজ তাঁকে “বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম” একজন হিসেবে সম্মানিত করেছে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ তাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও, তিনি ২০১১ সালে রোটারি ক্লাব অফ ইন্ডিয়া থেকে ম্যান অফ দ্য মিলেনিয়াম পুরস্কার এবং লাইফ টাইম অফ সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

images 19 1

অর্থের প্রসঙ্গে কল্যাণসুন্দরাম জানিয়েছেন, টাকা তাকে মোটেও প্রভাবিত করে না। তাঁর মতে, “একজন ব্যক্তি সম্ভাব্য তিনটি উপায়ে অর্থ পেতে পারেন। প্রথমত, উপার্জনের মাধ্যমে; দ্বিতীয়ত, পিতামাতার উপার্জনের মাধ্যমে এবং তৃতীয়ত, কারোর দ্বারা দান করা অর্থের মাধ্যমে। কিন্তু আপনার নিজের উপার্জন থেকে অর্থ দান করতে সক্ষম হওয়ার চেয়ে পরিপূর্ণতা আর কিছুতেই নেই।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর