ঠিক যেন সিনেমা! ৬৫ টাকা বেতনে করতেন সাফাইকর্মীর কাজ, আজ SBI-র শীর্ষ আধিকারিক প্রতীক্ষা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : কথায় আছে “যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।” বাস্তবে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এ ধরনের উদাহরণ দেখতে পাই। কিন্তু সামান্য একজন সাফাই কর্মচারী থেকে ব্যাংকের শীর্ষ পদে আহরণ করা প্রতীক্ষা টন্ডওয়ালকরের (Pratiksha Tondwalkar) জীবন হার মানাবে যে কোন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও।

বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তাই মাত্র কুড়ি বছর বয়সে সাফাই কর্মী হিসেবে যোগদান করেন ব্যাংকে। এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে নিজেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় যোগ্য করে পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ পৌঁছেছেন স্টেট ব্যাংকের এক গুরুত্বপূর্ণ পদে। আমাদের ভারতবর্ষের মতো পুরুষ প্রধান দেশে একজন মহিলার পক্ষে নিজেকে প্রমাণ করাটা যথেষ্ট কঠিন একটি কাজ। তার মধ্যে সে যদি আর্থিকভাবে দুর্বল হয় তাহলে তাকে পিছিয়ে যেতে হয় বহু গুণ। কিন্তু অদম্য জেদ আর লড়াই যে মানুষকে একদিন তার স্বপ্নের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে তারই এক জীবন্ত উদাহরণ প্রতীক্ষা দেবী।

১৯৬৪ সালে পুনে শহরে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম প্রতীক্ষার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় এসবিআই ব্যাংকের বুক বাইন্ডার সদাশিবের সাথে। বিয়ের এক বছর পর তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নিলে কিছু সময় পর তাকে নিয়ে গ্রামে যান সদাশিব। গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় সদাশিবের। তখন প্রতীক্ষার মাত্র কুড়ি বছর বয়স। প্রতীক্ষা দেবী জানান, “স্বামীর মৃত্যুর পর তার বেতন নিতে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার যোগ্যতা না থাকায় ঠিকঠাক চাকরি পাইনি। কিন্তু সন্তানকে মানুষ করার জন্য যেকোনো ধরনের একটা কাজ চেয়েছিলাম।”

ব্যাস তারপরই শুরু হল প্রতীক্ষার জীবনের এক অসম যুদ্ধ। মাসিক ৬৫ টাকার বিনিময় তিনি ওই ব্যাংকের সাফাই কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পাশাপাশি চলতে থাকে তার স্বপ্নের পিছনে দৌড়। ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা তাকে ফরম ফিলাপ করে দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দেন। প্রতীক্ষা দেবীর অসীম চেষ্টায় এরপর একে একে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও পরবর্তীতে মনোবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হন। এরপর তার ব্যাংকে কেরানী পদে প্রমোশন হয়।

১৯৯৬ সালে প্রতীক্ষা দেবী দ্বিতীয়বারের জন্য বিয়ে করেন এক ব্যাংক ম্যানেজারকে। তার স্বামী অর্থাৎ ব্যাংক ম্যানেজারের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহায়তায় এগিয়ে যেতে থাকেন প্রতীক্ষা। ২০০৪ সালে ট্রেইনি অফিসার হিসেবে যোগদান। এরপর একের পর এক প্রমোশন লাভ করে বর্তমানে এজিএম নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। এসবিআইয়ের সাথে ৩৭ বছর কাজ করার পর হাতে আর মাত্র দু’বছর আছে অবসরের। সেই ২০ বছর বয়স থেকে শুরু হওয়া প্রতীক্ষা দেবীর এই জীবন যুদ্ধ অনুপ্রাণিত করেছে সকলকে।

স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে প্রতীক্ষা দেবী বলেন,”যখন পিছনে ফিরে তাকায় সত্যিই খুব আশ্চর্য লাগে কিভাবে এতটা পথ অতিক্রম করলাম। সবাই কে এটাই বলবো জীবনে কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না।”

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর