‘বিচারপতিরা বিচারের ঊর্ধ্বে নন’, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার ইস্যুতে বিস্ফোরক সৌগত

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ‘বিচারপতিরা বিচারের ঊর্ধ্বে নন। এর আগে তাদেরকেও ইমপিচ করা হয়েছে’, বিস্ফোরক তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। গতকাল একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Ganguly)। একের পর এক বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে অবশেষে মুখ খুললেন সৌগতবাবু।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার বুকে একের পর এক দুর্নীতি ইস্যু এবং সেই সকল মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক রায়ের দরুণ সরগরম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত ১০ মাসে মোট ১০ টি মামলায় সিবিআইয়ের ওপর তদন্তের দায়ভার চাপিয়েছেন অভিজিৎবাবু। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন তিনি।

এ সকল ইস্যুকে কেন্দ্র করে যখন বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে শাসক দল, সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গতকাল একটি সাক্ষাৎকার চলাকালীন একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই সকল ইস্যু নিয়েই বর্তমানে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়ে চলেছে আর এবার অবশেষে মুখ খুললেন সৌগত রায়। তৃণমূল সাংসদ বলেন, “বিচারপতিরা বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। এর আগেও আমাদের দেশে তাদের ইমপিচ করা হয়।”

উল্লেখ্য, গতকাল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। কর্মরত থাকাকালীন একজন বিচারপতি সংবাদমাধ্যমে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারেন কিনা, সেই অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন অনেকেই। এদিন সেই প্রসঙ্গে সৌগতবাবু বলেন, “উনি যেটা করেছেন, সেটা ঠিক নাকি ভুল, তা দেশের মানুষ বিচার করবেন। তাছাড়া উনি সিবিআইকে কখনোই ধোয়া তুলসী পাতা বলেননি। ওনার কথা অনুযায়ী, সিবিআইকে দিলে হয়তো একটু ভালো হতো, এটা ভেবেই নির্দেশ দেন।”

তবে অভিজিৎবাবুর সাক্ষাৎকার নিয়ে একাধিক মহলে বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। গতকাল দুর্নীতির পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও প্রকাশ্যে আক্রমণ শানান তিনি। গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সাম্প্রতিক সময় বাংলায় মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে। সেই কারণেই সিবিআই দিতে হয়েছে। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করব। এর জন্য যদি জুডিশিয়ারি থেকে বহিষ্কার করা হয়, তাও আমি লড়াই চালিয়ে যাব। বেকারত্ব কি, তা আমার জানা আছে।” এরপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এর আগেও উনি একাধিক মন্তব্য করেছিলেন। তখনই রুল ইস্যু করবো ভেবেছিলাম। বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা বিতর্কিত মন্তব্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিন মাসের জন্য জেলে ঢুকিয়ে দেব। কেউ কিছু করতে পারবে না।”

Untitled design 2022 08 30T173646.607

এ সকল ইস্যু নিয়েই বর্তমানে একের পর এক চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্মরত একজন বিচারপতি প্রকাশ্যে কিভাবে সাক্ষাৎকার দিলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করলেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন অনেকে। এদিন হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং গাইডলাইন রয়েছে। সেই অনুযায়ী কর্মরত অবস্থায় একজন বিচারপতি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে কখনোই পারেন না।” অপর এক আইনজীবী বলেন, “সমাজের ভালোর জন্য যদি কেউ কোন মন্তব্য করে থাকে, তবে তা অন্যায় নয়। কিন্তু যদি কারোর মন্তব্যের দ্বারা বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তা অনুচিত।”

Sayan Das

সম্পর্কিত খবর