বাংলাহান্ট ডেস্ক: প্রাথমিক টেট-দুর্নীতির মামলায় (Primary TET Scam) প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhatacharya) এখন জেলে রয়েছেন। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে এক সময় প্রচুর জলঘোলা হয়েছিল। তিনি নাকি ‘পালিয়ে’ গিয়েছিলেন। তাঁর ‘অন্তর্ধান’ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষ অবধি তাঁকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।
ইডি-র গোয়েন্দাদের মতে, মানিকের সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে তাঁর স্ত্রী ও ছেলের কাছে। তাই তাঁদেরকেও জেরা করা জরুরি। কিন্তু কোথায় কী! মানিক ভট্টাচার্যের পর প্রায় একই ভাবে এবার উধাও তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। যাদবপুরে তাঁদের যে দু’টি বাড়ি রয়েছে সেগুলিতে তালা ঝুলছে। এমনকী, নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বাড়িতেও কোনও খোঁজ নেই মা ও ছেলের।
মানিকের পর তাঁর স্ত্রী-পুত্রেরও ‘অন্তর্ধান’ ঘটেছে। যেই রহস্যের সমাধান করতে প্রাণপনে চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। উল্লেখ্য, তদন্তকারী অফিসার ইতিমধ্যেই আদালতে নালিশ করেছিলেন যে মানিক ভট্টাচার্যের পুত্র সৌভিক তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। একাধিক তলবেও সৌভিক ইডি-র মুখোমুখি হচ্ছেন না বলে জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, মানিকের স্ত্রী শতরূপাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলের মতো তিনিও তদন্তে অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ।
ইডি সূত্রে খবর, সৌভিকের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের একটিতে রয়েছে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ এবং অন্যটিতে ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। আরও চাঞ্চল্যকর বিষয় হল ওই টাকা বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ এবং তাদের সংগঠন অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি সৌভিকের দু’টি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। ওই টাকা কীসের ভিত্তিতে সৌভিকের সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি।
সম্প্রতি মানিকের ঘনিষ্ঠ ওই কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল ও তাঁর দুই হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, সৌভিক খাদ্য দফতরের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হলেও ব্যবহার করতেন একটি বিলাসবহুল গাড়ি। শুধু সৌভিকই নয়, মানিক-পত্নী শতরূপার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও এখনও অবধি ৩ কোটি টাকার হদিশ পেয়েছে ইডি।
স্ত্রী ও ছেলের পাশাপাশি মানিকের মেয়ে ও জামাই এবং মেয়ের শ্বশুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপরও নজর রাখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। মানিকের পরিবারের একাধিক সদস্যের সঙ্গে যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এমনটাই দাবি করছে ইডি। সে জন্য সৌভিক ও শতরূপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাঁরা এই মুহূর্তে ফেরার। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই দু’জনকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন সুইচড অফ।
তাঁদের খোঁজে যাদবপুরের দু’টি বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। তবে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাড়িগুলি। ইডি-র তরফে জানানো হয়েছে, আরও কয়েকদিন খোঁজখবর করা হবে। তারপরেও সৌভিক ও শতরূপা সহযোগিতা না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। আদালতে জানানো হবে যে তাঁরা পলাতক এবং তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে।
এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন ২৮ জুলাই তাঁকে এবং মানিক ভট্টাচার্যকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়। এরপরেই বেপাত্তা হয়ে যান মানিক। সেই সময় সিবিআই আদালতে মানিকের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারির আবেদন করে। তবে পরে মানিক নিজের বাড়ি ফিরে আসেন এবং ইডি-র তদন্তকারীদের তলবে সাড়া দেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকেও গ্রেফতার করে ইডি।