বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার আরও একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (Indian Space Research Organisation, ISRO)। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই সূর্যকে ভালোভাবে নিরীক্ষণের উদ্দেশ্যে দেশের প্রথম ডেডিকেটেড মিশন আদিত্য-L1 (Aditya-L1) লঞ্চ করার লক্ষ্য তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে শঙ্করসুব্রহ্মণ্যন কে (Sankarasubramanian K)-কে আদিত্য-L1 মিশনের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। এমতাবস্থায়, ২০১৫ সালে AstroSat-এর সফল উৎক্ষেপণের পর, আদিত্য-L1 হবে ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশ-ভিত্তিক প্রকল্প।
সূর্যের ওপরেই থাকবে নজর: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, সূর্যের একাধিক নামের মধ্যে অন্যতম সংস্কৃত নাম হল আদিত্য। আর সেই নামানুসারেই সৌরজগতের কেন্দ্রে উপস্থিত নক্ষত্রটিকে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করার জন্য ISRO-র এটি একটি পরিকল্পিত মিশন। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (PSLV-XL) মারফত অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে আদিত্য-L1-এর উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে স্থিত জাতীয় মহাকাশ সংস্থার মতে, এই মহাকাশযানটি সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের প্রথম ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট, L1-এর চারপাশে একটি হ্যালো কক্ষপথে অবস্থান করবে। এই অবস্থানটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে রয়েছে। যেখানে সূর্য এবং পৃথিবীর সম্মিলিত মহাকর্ষীয় টান একটি মহাকাশযানকে সূর্যের কাছে প্রায় স্থির থাকতে দেবে।
এই মিশনের তাৎপর্য: আদিত্য-L1-এ সাতটি পেলোড রয়েছে। যা আলোকমণ্ডল, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তরগুলি (করোনা) অধ্যয়নের জন্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এবং পার্টিক্যালস ডিটেক্টর ব্যবহার করে। তিনটি পেলোড ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট L1-এ ইন-সিটু কণা এবং ফিল্ড স্টাডি পরিচালনা করে। পাশাপাশি বাকি চারটি পেলোড সরাসরি L1-এর ইউনিক ভান্টেজ পয়েন্ট থেকে সূর্যকে দেখতে পাবে।
এই প্রসঙ্গে ISRO-এর ওয়েবসাইট অনুসারে জানা গিয়েছে, এই মিশনের কিছু বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম সূর্যের ওপরের বায়ুমণ্ডলীয় (ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা) গতিবিদ্যা অধ্যয়ন করা এবং সৌর করোনার ভৌত বিষয় এবং এর হিটিং মেকানিজম সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
এদিকে, সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হল ১০,০০০,০০ K এবং এর নিম্ন তাপমাত্রা হল ৬,০০০ K। এমতাবস্থায়, তাপমাত্রার এহেন পার্থক্য সৌর পদার্থবিদ্যার গবেষণায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অমীমাংসিত সমস্যাগুলির মধ্যে একটি। মিশনটি সূর্যের বায়ুমণ্ডলের অনেকগুলি স্তরের কাছাকাছি-একযোগে ছবি নেওয়ার চেষ্টা করবে। যেটি থেকে বোঝা যাবে যে, কিভাবে শক্তি এক স্তর থেকে অন্য স্তরে প্রেরিত ও পরিবাহিত হয়।
কেন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই প্রকল্পটির নাম প্রাথমিকভাবে আদিত্য-1 হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও, পরবর্তীকালে স্যাটেলাইটটি সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্ট 1 (L1)-এর হ্যালো কক্ষপথে অবস্থান করায় এর নামকরণ করা হয় আদিত্য-L1 মিশন। এদিকে, একাধিক পেলোড যুক্ত করার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি সারা দেশের সৌর বিজ্ঞানীদেরকে স্পেস-ভিত্তিক যন্ত্র এবং পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছে। ISRO-এর ওয়েবসাইট অনুসারে, আদিত্য-L1 প্রকল্পটি সূর্যের গতিশীল প্রক্রিয়াগুলির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান প্রদান করবে এবং সৌর পদার্থবিদ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যারও উত্তর এনে দেবে।