বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিনোদুনিয়া থেকে রাজনৈতিক মহল, আলোচনার কেন্দ্রে এখন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ (The Kerala Story)। আর হবে নাই বা কেন, এই একটি ছবি ঘিরে হাজারো তর্ক বিতর্ক প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে। বাংলায় হিংসার পরিবেশ তৈরি হতে পারে এমন কারণ দেখিয়ে ছবিটি নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে একদিকে শিল্পী সমাজে মতবিরোধ চলার মাঝেই মুখ খুললেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)।
ইতিমধ্যেই দ্য কেরালা স্টোরি দেখে ফেলেছেন তিনি। কী প্রতিক্রিয়া লেখিকার? এমনিতে বিভিন্ন সময়ে স্বধর্মের সমালোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু কেরালা স্টোরি দেখে বিষ্ফোরক তসলিমা। একটি বড়সড় পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি দেখা হলো। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি , এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী।’
এরপরেই তাঁর বক্তব্য, ‘পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না-জানা, ধর্মের নানা রকম রুল্স এবং রিচুয়ালস না-পালন করা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি।
মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা শিক্ষিত সভ্য লোকের সংখ্যাও এই সম্প্রদায়ে নেহাত কম নয়। এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি , খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়।’
ছবিটি সম্পর্কে তসলিমার বক্তব্য, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনওভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরান হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে, কারও সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।’
তিনি এও বলেন, কালিকট কোঝিকোড়ে তিনি যখন গিয়েছিলেন তখন অনেক মুসলিম নারী পুরুষ তাঁর বক্তব্য শুনতে এসেছিলেন। কেরালা থেকে ৩২ হাজার মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে এ তথ্যে তাঁর সন্দেহ রয়েছে বলেই মন্তব্য করেন তসলিমা। বরং তাঁর মতে, ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো বেশি জরুরি।
এর আগে তসলিমা জানিয়েছিলেন, তিনি ছবিটি দেখবেন এবং ভাল খারাপ মতামতও দেবেন। সেই মতো লেখিকা এদিন স্পষ্ট জানান, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ তাঁর পছন্দের সিনেমা নয়। কিন্তু তাই বলে তিনি এও চাননা যে এই ছবি কোথাও নিষিদ্ধ হোক।