বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এবারের পঞ্চায়েতে অন্য সব প্রার্থীদের থেকে লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন কোচবিহার ( Coochbehar) জেলা পরিষদের ন’নম্বর আসনে প্রার্থী পিঙ্কি বর্মণ। জেলা জুড়ে এখন তার চর্চা। কারণ কোচবিহার জেলা পরিষদের সবগুলি আসনের মধ্যে পিঙ্কিই একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী (Third Gender Candidate)। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তার নামের পাশে লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে ‘অন্যান্য’ বলে উল্লেখ রয়েছে।
রাজনীতির ময়দানে পিঙ্কি নিতান্তই নতুন। সমাজে আর পাঁচটা বৃহন্নলার মতো তিনিও খবর সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করেন। তবে প্রথম থেকেই সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ তার মধ্যে ছিল। তবে গোটা সমাজে কোনও পরিবর্তন আনতে গেলে যে রাজনৈতিক পরিচয় জরুরি সেই বুঝেই রাজনীতিতে পা তার। বিজেপিতে (BJP) যোগ দেওয়ার পরই প্রার্থী হওয়ার সুযোগও পেয়ে বেজায় আনন্দিত পিঙ্কি।
পিঙ্কির কথায়, ‘‘আর কোনও দলের বৃহন্নলা প্রার্থী রয়েছে কি না জানি না। খালি জানি বিজেপি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দল আমায় প্রার্থী করেছে। তাই আমি খুব গর্বিত। খুব খুশি।’’ নিজের জন্য প্রচারের পাশাপাশি দলের অন্য প্রার্থীদের জন্যও চলছে পিঙ্কির রাতদিন এক করে প্রচার।
পিঙ্কির বাড়ি কোচবিহারের মাথাভাঙায়। সেখানের অশোকবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পিঙ্কি শৈশবে মাকে হারান। এরপর দশ বছর হতেই পিঙ্কি বোধ হয় খুব স্বাভাবিক আর পাঁচটা মেয়ের মতো তিনি নন। এরপরেই শুরু জীবনযুদ্ধ। কারও বাড়ি সন্তান হলে ‘ছেলে না মেয়ে’ খোঁজ নিতে যাওয়া আর সেই থেকে প্রাপ্ত আয়েই চলতো পেট। তবে ‘মনসার গান’-এর গায়িকা হিসাবেও এলাকায় বিশেষ নাম রয়েছে তার।
পিঙ্কির কথায়, ‘‘লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। আমার যা জ্ঞান তার সবটাই জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে। আমার পরিচয় জানার পরে সমাজও আমায় ভাল চোখে দেখেনি। অনেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। তবে সমাজ যাই করুক আমি তার বদলা নিতে চাইনি। আমি বরং, সমাজের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। করেও চলেছি।’’
প্রসঙ্গত নিয়ে স্বল্প আয় থেকেই বৈরাগীর হাট এলাকায় অনাথ বৃহন্নলাদের জন্য ‘জীবন গাড়ি ফেরিওয়ালা’ নামের একটি আশ্রম তৈরি করেন পিঙ্কি। ওই আশ্রমের মধ্যেই এখন আবার একটা আলাদা অংশে সাধার বৃদ্ধ, বৃদ্ধাদের জন্য একটি আশ্রম বানিয়েছেন নেত্রী।
এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মা-বাবাদের জন্য আশ্রম।’’ নিজের হাতেই গড়েছেন বিষ্ণু মন্দির। পিঙ্কির কথায়, ‘‘এ গুলো করতে আমার খুব ভাল লাগে। মনসার গান বা কীর্তন, বৃহন্নলার কাজ সব করি। কারণ, ভাল কাজ করতে গেলে টাকা লাগে। এর পরে মানুষের দোরে দোরে ভিক্ষাবৃত্তি করে টাকা জোগাড় করি আশ্রমের জন্য, মন্দির বানানোর জন্য।’’
বিজেপির টিকিটে জিতলে সমাজের জন্য কাজ করতে চান তিনি। তার কথায় , ‘‘অনেক কাজ করব। আমি শুধু বৃহন্নলাদের জন্য নয়, সমাজের সব মানুষের জন্য, নারী, পুরুষ সবার জন্য কাজ করতে চাই। সমাজের সবচেয়ে বড় অভিশাপ দারিদ্র। আমার ছোট সামর্থ্যের মধ্যে চেষ্টা করব মানুষ যাতে খাবার, বাসস্থান পায়। পরনের কাপড় পান।’’ একটি স্কুল খোলারও পরিকল্পনা রয়েছে পিঙ্কির। পাশাপাশি এলাকায় বিজেপি খুব ভাল ফল করবে বলেও আশাবাদী তিনি।