বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশজুড়ে (India) রয়েছে হাজার হাজার গ্রাম। তবে সেই গ্রামগুলির মধ্যেই এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেগুলি তাদের অভিনব বৈশিষ্ট্যের কারণে উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পাশাপাশি, ওই গ্রামগুলি সম্পর্কে জানার পর রীতিমতো অবাক হয়ে যান প্রত্যেকেই। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে ঠিক সেইরকমই এক গ্রামের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যেটি “বিধবাদের গ্রাম” (Villages of Widows) নামে অভিহিত হয়। আর এই গ্রামের এহেন নামের পেছনে রয়েছে অবাক করা কারণও।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, এই গ্রামটি রাজস্থানে অবস্থিত রয়েছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই গ্রামের অধিকাংশ পুরুষই মারা গেছেন। এমনকি, এই মৃত্যুর বিষয়ে সবাই অবগত হলেও কোনো সঠিক উদ্যোগ না নেওয়ায় রীতিমতো বিধবাদের গ্রামে পরিণত হয়েছে এই এলাকা। রাজস্থানের বুন্দি জেলায় অবস্থিত বুধুপুরা গ্রামটিকেই বিধবাদের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সেখানকার খনিতে কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ পুরষের মৃত্যু ঘটেছে। পাশাপাশি, সেখানকার জনসংখ্যার অধিকাংশই সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। আর এই রোগই ক্রমাগত কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজস্থানের বুধপুরা গ্রামে বড় আকারের বেলেপাথর ভাঙার কাজ করা হয়। এদিকে, পাথর ভাঙার সময় সেখান থেকে নির্গত সিলিকা ধুলোর আকারে শ্রমজীবী মানুষের শরীরের ভেতরে গিয়ে তাঁদের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এমনকি, তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, সময়মতো চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু ঘটে তাঁদের।
জুম্মা বাই তাঁর তিন মেয়েকে নিয়ে খনিতে কাজ করেন: এই প্রসঙ্গে দ্য ওয়্যারের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বুধপুরা গ্রামের ৪০ বছর বয়সি জুম্মা বাই একটি পাথর খাদানে কাজ করেন। দু’দশক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর তিন মেয়েও খাদানে কাজ করে সংসার চালায়। যখন তিনি হাতুড়ি দিয়ে বড় পাথরে আঘাত করে, তখন তিনি তাঁর মাথায় থাকা ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। তাঁরা দৈনিক ১০ ঘন্টা এই কাজ করেন। পাশাপাশি, জুম্মার সাথে থাকা বাকি মহিলাদের অধিকাংশরই স্বামী সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
সিলিকোসিস রোগ: জুম্মা বাইয়ের মতো বুধপুরা গ্রামের শতাধিক মহিলা তাঁদের স্বামীকে হারিয়েছেন। আর তারপরেই সংসার চালাতে তাঁরা নিজেরাই এই কাজ করছেন। এমনকি, সিলিকোসিসে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, সেখানকার রোগীদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেশি হয়। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষই সিলিকোসিস নামক একটি গুরুতর রোগে ভুগছেন।
এমতাবস্থায়, যতক্ষণে এই রোগীদের রোগ শনাক্ত হয় ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই, সঠিক চিকিৎসারও সুযোগ থাকে না। এদিকে, এই পাথর খাদানে কাজের কারণে শত শত পরিবারের জীবন নষ্ট হলেও সরকার বা খাদান মালিকদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাহায্য মেলেনা বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে, কিছু সংস্থা তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। এমনকি, এই শ্রমিকদের সঠিক অধিকারের জন্যেও ওই সংস্থাগুলি লড়াই করছে বলেও জানা গিয়েছে।