ভারত থেকে তেজস কিনতে প্রস্তুত আর্জেন্টিনা! কিন্তু রয়েছে এই বড় শর্ত, চরম সমস্যার মুখে HAL

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) কাছ থেকে তেজস যুদ্ধবিমান কিনতে প্রস্তুত দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা (Argentina)। কিন্তু, এই চুক্তিতে এমন একটি প্যাঁচ রয়েছে, যা ভারতের অস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারতে আসা আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ এনরিক তাইয়ানা তেজস অধিগ্রহণ নিয়ে ভারতকে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, আর্জেন্টিনার পাইলটরা এটির শক্তি পরীক্ষা করার জন্য তেজস উড়িয়েছেন।

এমতাবস্থায়, জর্জ এনরিক স্পষ্ট বলেছেন যে, যতক্ষণ না ব্রিটেনের তৈরি যন্ত্রাংশ তেজস বিমান থেকে সরিয়ে অন্য দেশের যন্ত্রপাতি সেগুলির জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই চুক্তি নিয়ে সন্দেহের মেঘ বজায় থাকবে। উল্লেখ্য যে, তেজস ভারতের দেশীয় ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট হলেও এটিতে একাধিক দেশের যন্ত্রাংশ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেজস প্রস্তুতকারী হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেডের (HAL) সামনে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ, তেজসে লাগানো ব্রিটেনের যন্ত্রাংশ সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।

ব্রহ্মস ও তেজস কিনতে পারে আর্জেন্টিনা: চারদিনের ভারত সফরে এসে আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ এনরিক তাইয়ানা গত মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। এছাড়াও, তিনি ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস পরিদর্শন করেন এবং ভারত-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক মিসাইল সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য জেনেছেন। পাশাপাশি বুধবার বেঙ্গালুরুতে তাঁর হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে। মূলত, বর্তমানে আর্জেন্টিনা ভারতের ব্রহ্মস মিসাইল, তেজস যুদ্ধবিমান এবং বিভিন্ন দেশীয় হেলিকপ্টার কেনার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।

ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক চায় আর্জেন্টিনা: এই প্রসঙ্গে WION নিউজের সাথে কথা বলার সময়, জর্জ এনরিক তাইয়ানা জানান যে, তিনি আর্জেন্টিনা এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে চান। পাশাপাশি, তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ করে ভারত ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক জোরদার করতে আলোচনা করেছেন। এনরিক বলেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা খুব ভালো হয়েছে। আমরা যেভাবে বিশ্বকে দেখি এবং যে নীতির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়, তাতে দুই দেশের মধ্যে অনেক কিছুর মিল রয়েছে। যেমন অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা, সমস্ত দ্বন্দ্বের সমাধান। এই কারণে ভারত ও আর্জেন্টিনার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই মজবুত।”

তেজস কেনার প্রসঙ্গে কি জানিয়েছে আর্জেন্টিনা: এদিকে, তেজাস কেনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ এনরিক তাইয়ানা বলেন, “এটি একটি পরিষ্কার বিষয়। ভারত একটি উদীয়মান দেশ। যেটি প্রযুক্তিগত এবং খুব আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য সহ একটি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র তৈরি করেছে বা বিকাশ করছে। এমতাবস্থায়, আমরা কেবল কেনার সম্ভাবনার দিকে তাকাচ্ছি না, পাশাপাশি বিষয়টি দেখার এবং আলোচনা করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও, আমরা সুযোগগুলির ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিই। বিমানের ক্ষেত্রে যেহেতু আর্জেন্টিনা সুপারসনিক ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট খুঁজছে তাই, আমাদের কমিশন এবং টেকনিক্যাল কমিশন, বিভিন্ন ধরণের বিমান দেখতে বেশ কয়েকটি দেশ পরিদর্শন করেছে। আমরা বাছাই প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে আছি। কমিশনের সিদ্ধান্ত এক-দুই মাসের মধ্যে নেওয়া হবে।”

তেজস কেনার ক্ষেত্রে সমস্যা কি: আর্জেন্টিনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তেজস কেনার বিষয়টি কতদূর এগিয়েছে। এর উত্তরে তিনি বলেন, শুধু তেজস নয়, অন্যান্য বিমানের ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এনরিক জানান, “আমরা আমাদের পাইলটদের পাঠিয়েছি বিভিন্ন দেশের বিমান বিবেচনা করার জন্য। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশেষ বিষয় হল যে, প্লেনে একটিও ব্রিটেনের যন্ত্রাংশ থাকলে হবে না। কারণ ব্রিটিশরা এটি আর্জেন্টিনার কাছে বিক্রি করে না।” এদিকে, তেজসের ক্ষেত্রে এর ১৬ টি যন্ত্রাংশ ব্রিটেন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সুতরাং, কোম্পানিকে যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে হবে। তিনি আরও জানান, আর্জেন্টিনার পাইলটরা দু’বার তেজস উড়িয়েছেন।

Argentina is ready to buy Tejas from India under these conditions

আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেনের মধ্যে শত্রুতা কেন: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, আর্জেন্টিনা এবং ব্রিটেন ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে তাদের নিজ নিজ অধিকার দাবি করে। এদিকে, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ভৌগোলিকভাবে আর্জেন্টিনার কাছাকাছি থাকলেও সেটি ব্রিটেনের দখলে রয়েছে। ১৯৮২ সালে এই দ্বীপ দখলের জন্য উভয় দেশের মধ্যে ফকল্যান্ড যুদ্ধও হয়েছে। ওই যুদ্ধ টানা ১০ সপ্তাহ ধরে চলেছিল। পাশাপাশি, ওই যুদ্ধে আর্জেন্টিনার অনেক ক্ষতি হয়। এই কারণেই আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেন পরস্পরের শত্রু থেকে গেছে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর