বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে (India) প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে চেপেই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যান। এমতাবস্থায়, যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ অবলম্বন করা হয় রেলের তরফে। সেই আবহে এবার একটি বড়সড় তথ্য সামনে এসেছে। মূলত, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (National Crime Records Bureau, NCRB) দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, ট্রেনে ভ্রমণরত মহিলা যাত্রীদের উদ্দেশ্যে হিংসাত্মক ঘটনার পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
শুধু তাই নয়, ২০২১ পর্যন্ত এই পরিসংখ্যানে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় এহেন অপরাধের উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গিয়েছে। এদিকে, করোনার কারণে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাতের কারণে ২০২০ সালের ডেটা এখান থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে, ২০২২ এবং বর্তমান বছরের তথ্য এখনও NCRB-র তরফে প্রকাশ করা হয়নি।
কিভাবে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে রেল: যাত্রী নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতিমধ্যেই রেলের তরফে ৭,২৬৪ টি কোচ এবং ৮৬৬ টি রেলস্টেশন জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারির প্রচেষ্টা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি, রেলওয়ে ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক (RDN)-এ প্রদর্শিত পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট এবং ভিডিওর মতো মাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতামূলক প্রচারের একটি সিরিজ নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়। এই প্রচারের লক্ষ্য হল যাত্রীদের তাঁদের ভ্রমণের সময়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা। মূলত, জিআরপি এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায়, ট্রেনে সফরের সময় যাত্রীদের, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেগুলি হল:
১. ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেনগুলিকে এসকর্ট করা: ঝুঁকিপূর্ণ এবং চিহ্নিত কয়েকটি রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলির সাথে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (RPF) কর্মীদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের রেল পুলিশও প্রতিদিন যাতায়াত করে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া: যাত্রীদের সাথে যুক্ত হতে এবং তাঁদের নিরাপত্তা বাড়াতে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি সমাধান করতে টুইটার, ফেসবুক এবং কু-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রাখে রেল।
৩. ২৪/৭ হেল্পলাইন: রেলওয়ে হেল্প লাইন নম্বর ১৩৯ সর্বক্ষণ চালু থাকে। যা যাত্রীদের নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সহায়তা প্রদান করে।
৪. পাবলিক অ্যাড্রেস অ্যানাউন্সমেন্ট: পাবলিক অ্যাড্রেস অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত ঘন ঘন ঘোষণা করা হয়। যেখানে যাত্রীদেরকে চুরি, ছিনতাই, মাদকদ্রব্য এবং অন্যান্য সম্ভাব্য বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. “মেরি সহেলি” উদ্যোগ: একা ভ্রমণরত মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত ও অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য “মেরি সহেলি” নামের একটি উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি মূল স্টেশন থেকে গন্তব্য স্টেশন পর্যন্ত পুরো যাত্রাকে কভার করে।
৬. জেন্ডার-ব্যালেন্সড এসকর্ট দল: জানিয়ে রাখি যে, রেলওয়ে জোনগুলি ট্রেন এসকর্ট পার্টিগুলিতে পুরুষ এবং মহিলা RPF/RPSF কর্মীদের একটি জেন্ডার-ব্যালেন্সড এসকর্ট দল মোতায়েন করার নির্দেশ পেয়েছে।
৭. অযাচিত প্রবেশ রোধ: মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বগিতে পুরুষ যাত্রীদের অনুমতি ছাড়া অযাচিতভাবে প্রবেশ রোধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ট্র্যাকে ছুটল ভারতের সর্বোচ্চ গতির ট্রেন, জানুন ১৭ কিমি সফর করতে কত সময় লাগল
৮. রাজ্য স্তরের নিরাপত্তা কমিটি: রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য, সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে রেলের জন্য রাজ্য স্তরের নিরাপত্তা কমিটি (SLSCR) গঠিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ বা কমিশনার রয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, রেলের ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপগুলি ট্রেন ভ্রমণের সময় যাত্রীদের, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। যদিও ২০২২ এবং তারপরের NCRB ডেটা এখনও আসেনি। তবে, সামগ্রিকভাবে রেলের বর্তমান উদ্যোগগুলি সমস্ত যাত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।