বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ ২০২১ সালের মাঝামাঝি জুভেন্তাসের জার্সিতে কোপা ইতালিয়া জেতার পর দীর্ঘদিন ট্রফি হাতে উদযাপন করার সুযোগ পাননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। এর মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন এবং ঘটে গেছে অনেকগুলি বড় বড় ঘটনা। রোনাল্ডো মাঝে ফিরেছিলেন নিজের পুরনো ঠিকানা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং সেখানে প্রথম মরশুমে দুর্দান্ত ফুটবল খেলার পর দ্বিতীয় মরশুমে নতুন কোচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে ক্লাব ছেড়েছিলেন বিশ্বকাপের পরে। মাঝে নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও একাধিক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার মায়ের কঠিন অসুখে ভোগা, এক সদ্যোজাত সন্তানকে হারানো ইত্যাদি নানান কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন সিআরসেভেন।
ফলস্বরূপ বিশ্বকাপের সময় তিনি নিজের আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিলেন না এবং খারাপ পারফরম্যান্স করেছেন কাতারের মাটিতে। এরপরে ইউরোপিয়ান ফুটবলের মায়া কাটিয়ে তিনি চলে এসেছেন এশিয়ায় সৌদি আরবের লিগে খেলতে। সেখানেও নিজের প্রথম মরশুমে সাফল্য পাননি। কিন্তু এবার নতুন মরশুমের শুরুতে ফিরে দেখা গেল পরিচিত ক্রিশ্চিয়ানো-কে। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচের পরে কোয়ার্টার ফাইনাল সেমিফাইনাল এবং ফাইনালেও গোল করে নিজের নতুন ক্লাব ‘আল নাসের’-কে ‘আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স কাপ’ জেতালেন রোনাল্ডো।
এই মরশুমে তার দেখাদেখি এবং আকর্ষণীয় অফারের লোভে বেশ কিছু ইউরোপিয়ান ফুটবল খেলা তারকা ফুটবলার সৌদি আরবের বিভিন্ন ক্লাবে যোগদান করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে এবং সঙ্গে মিলে রোনাল্ডো সৌদি প্রো লিগে কেমন পারফরম্যান্স করেন সেদিকে নজর থাকবে সকলের। কিন্তু তার আগে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, যেমন মরক্কো, তিউনিশিয়া, মিশর, কাতারের সেরা ক্লাবগুলিকে নিয়ে আয়োজিত আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স কাপ খেলতে নেমে নিজের জাত জানালেন সিআরসেভেন।
আরও পড়ুন: সবচেয়ে শক্তিশালী ভারতীয় একাদশ থেকে বাদ শুভমান গিল! দলে সুযোগ পেলেন এই নবাগত তরুণ
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে তিনি ৯০ মিনিট খেলা শুরু করেন এবং তারপরে প্রত্যেকটি ম্যাচেই তিনি গোল পেয়েছেন। ফাইনালে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন সৌদি আরবেরই তারকা ক্লাব আল হিলালের। তারা কিছুসময় আগে এশিয়া সেরা হয়েছিল। গত ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ফাইনালে বেশ ভালোই লড়াই পেশ করেছিল। রোনাল্ডোর ক্লাব আল নাসেরের থেকে তারা বেশ কিছুটা সফল এবং ঐতিহ্যবাহী। সেই সঙ্গে বুঝে শুনে অত্যন্ত শক্তিশালী দল গঠনও করেছে তারা। এমনকি ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পরে ৫১ মিনিটে গোল করে এগিয়েও গিয়েছিল সৌদি আরবের দলটি।
এরপর ৭০ মিনিটের মাথায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দল ১০ জন হয়ে পড়ে একজন লাল কার্ড দেখায়। কিন্তু রোনাল্ডো যেন হাল ছাড়তে শেখেনি। ৭৪ মিনিটের প্রতি আক্রমণ থেকে গড়িয়ে আসা ক্রস জালে জড়িয়ে নিজের দলকে সমতায় ফেরান তিনি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে যেখানে ৯৮ তম মিনিটে পোস্টে লেগে ফিরে আসা বলে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে হেড দেন তিনি। ১০ জনের আল নাসের লিড পেয়ে যায়। ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিট মাঠে থাকতে পারেননি রোনাল্ডো। গত দু সপ্তাহে ছেলে ফেলেছেন সাতটি ম্যাচ এবং মনে রাখতে হবে তার বয়স বর্তমানে ৩৮।
আরও পড়ুন: গিল বা যশস্বী নন, বিপক্ষের মনে আতঙ্ক ধরানো এই ব্যাটার বিশ্বকাপে ওপেন করবেন রোহিতের সাথে
হাঁটুতে চোট পাওয়ার পর শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছিলো না। কিন্তু তাকে ছাড়া শেষ মিনিটগুলিতে নিজেদের গোল সামলে রাখার কাজটা আল নাসের ঠিকঠাকভাবেই করে এবং এর ফলে রোনাল্ডো পেয়ে যান নিজের কেরিয়ারের ৩৫তম ট্রফি। সেই সঙ্গে ৬ ম্যাচে ৬ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারটিও নিজের নামেই করে নেন তিনি। ফাইনালে ম্যাচের সেরার সম্মানটিও জোটে তারই কপালে। দীর্ঘদিন খারাপ সময় কাটানোর পর কেরিয়ারের শেষে এসে এশিয়ার মাটিতে নিজের দলকে একটি বড় ট্রফি জিতিয়ে রোনাল্ডো আবারও প্রমাণ করলেন তিনি অপরিহার্য।