বাংলা হান্ট ডেস্ক : ‘সুপার কপ অনিমেষ দত্ত’! সম্প্রতি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়া রাজ চক্রবর্তীর (Raj Chakraborty) ওয়েব সিরিজ (Web Series) ‘আবার প্রলয়’ (Abar Pralay) রীতিমতো ঝড় তুলেছে নেট দুনিয়ায়। অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছে বক্স অফিসে মারাত্মক ব্যবসা করা ছবি ‘প্রলয়’। সুটিয়া এলাকায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শিক্ষক বরুন বিশ্বাসের (Barun Biswas) কাহিনির আধারে গড়ে ওঠে এই ছবি।
স্টেশন চত্বরে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় বরুনকে। এরপর তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সম্পূর্ণ করেন তাঁর এক সহকর্মী। নাম বিনোদবিহারী দত্ত। এক এক করে হত্যা করেন বরুনের খুনিদের। ছবির অন্তিম পর্যায়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার অনিমেষ দত্তের হাতে ধরাও পড়ে যান বিনোদবিহারী। কিন্তু গ্রেফতার করার বদলে অনিমেষ মুক্তি দেন তাঁকে। বিনোদবিহারী দত্ত চরিত্রটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন পরাণ বন্দোপাধ্যায়। আর এই চরিত্রটিই হল ‘প্রলয়’ এবং ‘আবার প্রলয়’-র মূল যোগসূত্র।
‘আবার প্রলয়’-এ ফিরে আসেন পরাণ বন্দোপাধ্যায় ওরফে বিনোদবিহারী। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে ওয়েব সিরিজটির আসল রহস্য। ‘বিনোদবিহারী’ চরিত্রটি আদৌও কাল্পনিক নয়, বরং সম্পূর্ণ বাস্তব চরিত্র এটি। ঠিক ‘প্রলয়’-র বরুণ বিশ্বাস-র মতোই। নারী সুরক্ষায় গঠিত ‘শক্তিবাহিনী’র অস্তিত্বও বাস্তবে রয়েছে। শুধু তাই নয়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অনিমেষ দত্ত চরিত্রটিও এক বিশেষ পুলিস আধিকারিকের আদলে তৈরি। তিনি হলেন পশ্চিমবঙ্গ গোয়েন্দা দফতরের মানব পাচার বিরোধী শাখার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সর্বরী ভট্টাচার্য। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সাড়া জাগানো ‘আবার প্রলয়’-র পিছনের বাস্তব ঘটনা।
আজ থেকে বছর ছয়েক আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। খবরটির শিরোনাম ছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের জালে মানব পাচারের বিরাট র্যাকেট : অভিযুক্ত এলাকার মেয়েদের খবর এনে দিত মাত্র ১০০ টাকায়!’ এই ঘটনার মূলেই ‘আবার প্রলয়’-র কাহিনির সাদৃশ্য খুঁজে পায় বাংলা হান্ট।
কী সেই ঘটনা? এই ঘটনার সূত্রপাত দুটি মোবাইল নম্বর। দুটি মোবাইল নম্বরই সুন্দরবন এলাকার ১৮ বছরের এক তরুণীর। তাঁর সাহয্যেই মানব পাচারের এক বিরাট র্যাকেটের সন্ধান পায় পুলিস। পুলিসের ফাঁদে পড়ে এই র্যাকেটের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি। জানা যায় ওই ব্যক্তি ফোনের মাধ্যমে যুবতী মেয়েদের ফুঁসলিয়ে দিল্লি, আগ্রা, হরিয়ানার মতো জায়গায় একাধিক পতিতাপল্লীতে বিক্রি করে।
মথুরাপুর এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের হাতে ধরা পড়ে রাকেশ হালদার ওরফে ফারহা আলি গায়েন। ২১ বছরের ওই তরুণ বাংলার একাধিক আদিবাসী এলাকার মোবাইল রিচার্জের দোকানে ফাঁদ পেতে রাখত। ওই দোকান গুলিতে যে সমস্ত মেয়েরা মোবাইল রিচার্জ করাতে আসত তাঁদের নম্বর সে জোগাড় করত দোকানের মালিক ১০০-২০০ টাকা ঘুষ দিয়ে।
এরপর রাকেশ তার ‘বস’কে মেয়েদের খুঁটিনাটি শারীরিক বৈশিষ্ট্য সহ জানাত। এরপর চলত দরদাম। ‘ডিল’ ঠিক হলে সেই মেয়েটিকে মোবাইল ফোন কলে ফুঁসলিয়ে ওই সমস্ত ‘বস’দের কাছে বিক্রি করত রাকেশ। এই কাজে একাধিক ২০-২১ বছরের ছেলেদেরও কাজে লাগাত সে। প্রতি মেয়ে পিছু ৫০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত দিত সে। পুলিস জানতে পারে আসল পাচারকারীকে বিক্রি প্রতি মেয়ে পিছু প্রায় ৫০ হাজার টাকা মুনাফা করত অভিযুক্ত রাকেশ।
পুলিসের জেরায় রাকেশ স্বীকার করে অধিকাংশ মেয়েদের রাখা হত লক্ষ্মী নগর, সঙ্গম বিহার, জৈতপুর এলাকায়। যে মেয়েটির ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিস রাকেশ পর্যন্ত পৌছয় সেই মেয়েটিকে রাখা হয় আগ্রায়। উদ্ধার হওয়ার পর রাকেশকে সনাক্ত করেন ওই তরুণী।
‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে অসংখ্য যুবতীকে পাচার করা হয়। পুলিস সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করছে নারীপাচারের এই র্যাকেটকে ভাঙার।’ জানান শক্তিবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ঋষিকান্ত। এই ঋষিকান্ত চরিত্রের অনুকরণেই তৈরি হয়েছে পরাণ বন্দোপাধ্যায়ের বিনোদবিহারী দত্ত। আদতে রাজ চক্রবর্তীর ‘আবার প্রলয়’ ওয়েব সিরিজের আধার সত্য ঘটনা অবলম্বনেই।