বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে চলার পথে সফল (Success Story) তাঁরাই হতে পারেন যাঁরা সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে নিজের আত্মবিশ্বাস এবং মনোবলের ওপর ভর করে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যান। পাশাপাশি, তাঁদের এই কঠিন সফরের কাহিনি উদ্বুদ্ধ করে বাকিদের। বর্তমান প্রতিবেদনেও আজ আমরা ঠিক সেই রকমই এক লড়াকু ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি একটি ভাঙ্গাচোরা খড়ের বাড়ি থেকে নিজের সফর শুরু করে আজ মানুষের বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট এবং বাড়ি প্রদান করেছেন। শুধু তাই নয়, একটা সময়ে যিনি ছিলেন সহায় সম্বলহীন আজ তাঁরই বার্ষিক আয়ের পরিমাণ হল ২০ কোটি টাকা। মূলত, আমরা বিহারের (Bihar) মুজাফফরপুর জেলার শিবদাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মুকেশ কুমারের কথা বলছি।
গ্রাম থেকে শুরু হয় লড়াই:
মুজাফফরপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে থাকা মুকেশের গ্রাম প্রায় ৬ মাস বন্যার জলে ডুবে থাকত। এমনকি, সেখানে ছিলনা বিদ্যুৎ এবং রাস্তাও। তবে, আজ মুকেশ কুমার এম-সানভি রিয়েল এস্টেট নামে একটি কোম্পানি খাড়া করে ফ্ল্যাট তৈরি, বিক্রি এবং ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করছেন।
শ্রমিকের কাজ করে সন্তানদের পড়াতেন বাবা:
মুকেশ কুমারের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অল্প জমিতে চাষাবাদ করে তাঁদের সংসার চলত। কিন্তু মুকেশ জীবনে বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন। দৈনিক ভাস্করকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ জানিয়েছেন, “আমার বাবা পড়াশোনা করতেন পারেননি। আমি তাঁর ব্যথা বুঝতাম। কিন্তু আমার বাবা চেয়েছিলেন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করুক। আমাদের কাছে বই কেনার টাকাও ছিল না। ধার করা টাকায় পড়াশোনা চলত। আমরা যখন বড় হলাম, বাবা আমাদেরকে শহরে পাঠালেন। আমাদের পড়াতে গিয়ে তিনি মাসে ১,২০০ টাকার বেতনে শহরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ”
আরও পড়ুন: মালগাড়ির কেবিনে কেন জল, বিদ্যুৎ দেয়না রেল! প্রকাশ্যে এল কারণ, জানলে উড়ে যাবে হুঁশ
দশম শ্রেণির পরীক্ষায় করে যান ফেল:
মুকেশ পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ফলাফল করতে পারেননি। এমনকি, তিনি দশম শ্রেণিতে ফেল করেছিলেন। তার পরের বছর ১৯৯৬-৯৭ সালে তিনি দশম শ্রেণি পাশ করেন। পাশাপাশি, আরও পড়াশোনার জন্য টাকা জোগাড় করার জন্য টিউশনিও পড়ান। তাঁর বাবা জমি বিক্রি করে ছেলেকে এমবিএ করান। কিন্তু এমবিএ করার পরও মুকেশের ভাগ্য বদলায়নি। অনেক কষ্টে মুকেশ একটি কোম্পানিতে মাসিক ১২,০০০ টাকার চাকরি পান।
আরও পড়ুন: এবার এই কেন্দ্রীয় সংস্থায় চাকরির সুযোগ! জারি হল বিজ্ঞপ্তি, এভাবে করুন আবেদন
বর্তমানে বার্ষিক আয় ২০ কোটি টাকার বেশি:
কথায় আছে, ভাগ্য বদলাতে সময় লাগে না। কেউ একজন মুকেশকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তিনি খুব ভালো কথা বলতে পারেন এবং তাঁর রিয়েল এস্টেটের কাজ করা উচিত। এরপরে মুকেশ একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে মাসে ১৪,০০০ টাকার পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করেন। মুকেশ যখন এই ব্যবসায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তখন তিনি তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।
২০১৫-১৬ সালে, মুকেশ দু’জনের সাথে একটি কোম্পানি শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিছু কারণে ওই কোম্পানি থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন। এরপর মুকেশ নিজের আলাদা একটি কোম্পানি শুরু করেন। আজ আমরা এই কোম্পানিটিকে এম-সানভি রিয়েল এস্টেট নামে চিনি। আজ তিনি এই কোম্পানির মাধ্যমে ফ্ল্যাট নির্মাণ, বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি, বর্তমানে মুকেশের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ হল ২০ কোটি টাকা।