বাংলা হান্ট ডেস্ক: কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati) প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতির একের পর এক প্রশ্নে রীতিমতো বিদ্ধ হল পুলিশ। পাশাপাশি, প্রশ্ন তোলা হল পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। এক কথায়, প্রাক্তন উপাচার্যের মামলার প্রসঙ্গে বিরক্ত হাইকোর্ট। এমনকি, অবস্থা এতটাই বেগতিক হয়ে যায় যে, একটা সময়ে বিচারপতি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে তাঁকেও কেস দিতেন দেখছি!’’
ঠিক কি হয়েছে: উল্লেখ্য যে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একটি মামলার শুনানি ছিল। এই মামলাটি করেছিল পুলিশ। যেটির শুনানি চলছিল বুধবার। আর ওই মামলাতেই বিদ্যুতের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন স্বয়ং বিচারপতি।
বিচারপতি সেনগুপ্ত স্পষ্ট বলেন, ‘‘পুলিশ আগে ধারা যোগ করে দিয়ে পরে তদন্ত করে দেখে আদৌ অপরাধটি ধর্তব্য কি না। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখন জীবিত নেই। তা হলে কী যে করতেন! হয়তো তাঁকেও অভিযুক্ত করত পুলিশ।’’ এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকাকালীন বহু বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।
এমতাবস্থায়, তাঁর পদের মেয়াদ ফুরোনোর পর তাঁকে মোট পাঁচটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে নোটিশ পাঠায় শান্তিনিকেতন থানা। এদিকে পুলিশের ওই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে পোঁছে যান বিদ্যুৎ। ঠিক তারপরেই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশও মামলা করে হাইকোর্টে।
আরও পড়ুন: সুখবর! ফের কমল সোনা-রুপোর দাম, জেনে নিন সর্বশেষ দর
এদিকে জানা গিয়েছে, সেইরকমই একটি মামলায় পুলিশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা বিদ্যুতের একটি চিঠির প্রসঙ্গ যুক্ত করে দেয়। মূলত, বিদ্যুৎ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য লেখা ওই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। এমতাবস্থায়, বিচার চলাকালীন ওই চিঠির প্রসঙ্গ উঠতেই বিচারপতি স্পষ্ট প্রশ্ন করেন ওই চিঠির সঙ্গে মামলার ঠিক কি সম্পর্ক রয়েছে?
আরও পড়ুন: Jio-র গ্রাহকদের জন্য সুখবর! বাজার কাঁপাচ্ছে ৩০ টাকার নিচের এই প্ল্যানগুলি, মিলছে বাম্পার সুবিধা
শুধু তাই নয়, পুলিশের উদ্দেশ্যে আরও প্রশ্ন ছুঁড়ে বিচারপতি মন্তব্য করেন, “সংশ্লিষ্ট চিঠিতে ধর্তব্য অপরাধ কী রয়েছে, সেটাই তো স্পষ্ট নয়।” তিনি আরও জানান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার মানে এটা প্রমাণিত হয়না যে, দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা লাগতে পারে বা গুজব থেকে অশান্তি ছড়াতে পারে।’’ অর্থাৎ, চিঠির প্রসঙ্গটি যে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সেই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই পুলিশকে কটাক্ষ করে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টেনে আনেন বিচারপতি।
যদিও, বিদ্যুতের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, তিনি এক টোটোচালককে টোটো চালাতে বাধা প্রদান করেছেন। এই মামলাতেও আদালতের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে পুলিশকে। পাশাপাশি বিচারপতি জানিয়ে দেন যে, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এখনই পুলিশ কোনো কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না। এর পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ ছাড়া এই মামলায় চার্জশিট বা কোনো তদন্ত রিপোর্টও দেওয়া যাবেনা। এমতাবস্থায়, আগামী ১১ জানুয়ারি বিকেল ৩ টে নাগাদ হাইকোর্টে এই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।