বাংলা হান্ট ডেস্ক : বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট করে একটা দিনও তাদের ছুটি থাকেনা। স্বামীর অফিস সামলে বাচ্চার স্কুল থেকে শুরু করে শ্বশুর শ্বাশুড়ির ওষুধ পত্র সামলে কেটে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা। তারপরেও কাউকে কাউকে আবার শুনতে হয়, ‘বাড়িতেই তো আছো। আরাম করছ। কষ্ট করে রোজগারের মর্ম তুমি কী বুঝবে?’ সত্যিই কি তাই? সকাল থেকে সন্ধ্যা হাড়ভাঙা খাটুনির কি কোনও পারিশ্রমিক নেই? সম্প্রতি এই গৃহবধূদের (Housewife) হয়েই বড় রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
১৫ বছরের পুরনো একটি মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই উঠে আসে সংসারের গৃহবধূদের কথা। বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের বেঞ্চে এই মামলা উঠলে কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে, গৃহবধূরা বেকার? সংসারে গৃহবধূদের অবদান অনেক বড়। তারা কোনও ছুটি না নিয়ে ৩৬৫ দিন সংসারের যাবতীয় কাজ করেন। একই কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করালে যে খরচ হত, তা ব্যয় করতে হয় না ওদের দৌলতেই।’
তাই গৃহবধূরা বেকারও নন আর তাদের কাজও ফেলনা নয়। যেহেতু একজন গৃহবধূর কারণে সংসারে আর্থিক খরচ কম হয় তাই তাদেরকেও উপার্জনকারী হিসেবেই দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের বেঞ্চ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের এপ্রিলে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক মহিলার। এরপর বর্ধমানের মোটর অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেম ট্রাউব্যুনালে মামলা করে মৃতার পরিবার।
আরও পড়ুন : ৪০০-রও বেশি আসন পাবে বিজেপি, মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ নানা পাটেকার, করলেন ভবিষ্যদ্বাণী
মামলায় ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হলে সংস্থাটি তা অস্বীকার করে। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। তারপরেই আদালতের দ্বারস্থ হয় মৃতার পরিবার। আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় মৃতার পক্ষে সওয়াল করার সময় বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ঐ গৃহবধূর উপার্জন বাবদ কমপক্ষে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তখন সংস্থার তরফ থেকে পাল্টা জানানো হয় যে, মৃতা মহিলা কর্মজীবী ছিলেননা। তাই এই বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করার কোনও মানেই হয়না।
আরও পড়ুন : শুরুর আগেই ফাটল, মমতার উপর বেজায় চটে নীতীশ, অনিশ্চিত INDIA জোটের ভবিষ্যৎ
তবে আদালত জানিয়েছে গৃহবধূ মানেই বেকার নয়। কারণ তিনি সংসারের কাজ করেন বলেই ঘরের প্রচুর টাকা বেঁচে যায়। সংসারে ওদের কাজের আর্থিক মূল্যও রয়েছে। আর এই কারণেই কমপক্ষে ৩০০০ টাকা বেতন ধার্য করে তার উপর সুদের হার হিসেব করেই এই ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। সংস্থাটি ক্ষতিপূরণ বাবদ যে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছে সেটা বাদ দিয়ে বাকি ৪ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।