বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আগেই রোজভ্যালি কাণ্ডে (Rose Valley Case) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। এ বার প্রতারিতদের টাকা ফেরাতে উচ্চ আদালতের গড়ে দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সেই কমিটিই আর্থিক অনিয়মে সিবিআই তদন্তের মুখে।
তদন্তে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট | Calcutta High Court
শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলা শুনানির জন্য উঠলে চরম হতাশা প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। ইডি এবং সিবিআইয়ের আইনজীবীকে এই সপ্তাহের মধ্যেই রোজভ্যালির যাবতীয় নথি সিবিআইকে দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশ, রোজভ্যালির মূল মামলার তদন্ত কতদূর তা আগামী শুক্রবার সিবিআইকে জানাতে হবে। তার পরের ১৫ দিনের মধ্যে এডিসি-র আর্থিক গরমিলের অভিযোগের তদন্ত করে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই বিষয়ে লিখিত নির্দেশ দেবে আদালত।
এদিকে ওই এডিসি-তে রয়েছেন আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র সদস্যও। এক্ষেত্রে কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত হবে সেই বিষয়ে আশঙ্কায় আমানতকারীদের একাংশ। গতকাল আদালতে আমানতকারীদের তরফে এডিসি-র বিরুদ্ধে বেশ কিছু নথি-সহ পেশ করা হয়। এডিসি-র যে রিপোর্ট জমা পড়েছিল, সেই নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ।
শুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের নথি দেখিয়ে আমানতকারীদের দাবি, একাধিক ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২৬ জুন আদালত ওই কমিটি বন্ধ করার বিষয়ে বলেছিল। তারপরই দেখা যায় গত ৩০ জুন রোজভ্যালির আমানতকারীদের টাকা গচ্ছিত থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার হয় এডিসি-র অফিস অ্যাকাউন্টে। যার পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লক্ষ।
আমানতকারীদের পক্ষের আইনজীবীর দাবি, ওই একই দিনই আবার ওই অফিস অ্যাকাউন্ট থেকে চেয়ারপার্সনের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা পাঠানো হয়। এই সমস্ত বিষয় সামনে আসতেই চূড়ান্ত ক্ষোভপ্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। তৎক্ষণাৎ সিবিআইকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এডিসি ও ইডির ভূমিকায় প্রশ্ন তোলে আদালতে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ইতিমধ্যেই রোজভ্যালির ৩১ লাখ আমানতকারীর টাকা ফেরতের আবেদন জমা পড়েছে। বর্তমানে ৭৪ হাজার লোককে টাকা মেটানোর মত পরিস্থিতি রয়েছে। ৫৩১ কোটি টাকা রয়েছে। তাহলে তার পরেও কেন টাকা মেটানো হয়নি! প্রশ্ন তোলে আদালত।
সংস্থার আরও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি হাতে রয়েছে কমিটির। সেগুলি এখনও বিক্রি করা হয়নি বলে অভিযোগ। অভিযোগ সেই সব সম্পত্তি বিক্রি তো করাই হয়নি, উল্টে দু’জন লোককে যুক্ত করে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছে সেই খাস কমিটিই! একথা শুনেই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। হাইকোর্ট মতে, খাস কমিটিকে এই সুযোগ ইডি-ই করে দিয়েছে। এডিসি রিপোর্টে অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই ওই দু’জনকে যুক্ত করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: চিতল মাছকেও হার মানাবে এই দুটি মাছের মুইঠ্যা, বাড়িতে আজই বানিয়ে ফেলুন এই রেসিপিগুলি
ইডির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট। আদালতে উপস্থিত ইডির আইনজীবী বলেন, ‘আমরা শুধু টাকা মেটানোর বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ওই দু’জনকে যুক্ত করতে বারণ করিনি।’ সিবিআইকে বিচারপতির নির্দেশ, রোজভ্যালির এডিসি একটি গ্রুপকে কী করে হোটেল ব্যবসা চালাতে দিল? কী করে নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তিকেই বা যুক্ত করা হল? তার তদন্ত করা হোক। এডিসি-তে আমানতকারীদের সদস্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করেন বিচারপতি।