বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবিলা করতে একজোট ভারত-চিন (India-China)। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের(Donald Trump) নতুন শুল্ক নীতি নিয়ে এবার ভারতের পাশে দাঁড়াল প্রতিবেশী দেশ চিন। শুল্ক (Tariff) ইস্যু নিয়ে ভারতের উপরে আমেরিকার এই ‘দাদাগারি’ নিয়ে সরব চিনও। চিনের রাষ্ট্রদূত শু ফেইহং(Xu Feihong) আমেরিকা(America) ‘মস্তানে’র মতো আচরণ করছে বলেই উল্লেখ করলেন।
ভারত-চিন পাশপাশি (India-China)
শুল্ক যুদ্ধের আবহেই ভারতের পাশে থাকার বার্তা চিনের। রাশিয়ার(Russia) থেকে বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কেনার অপরাধে অতিরিক্ত ২৫শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের ভারতের ওপর এই ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ব্রোধিতা করে সরব হয়েছে চিন। সরাসরি ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতিকে মল্তানি বলে তোপ দেগেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত শু ফেইহং। বৃহস্পতিবার চিনা রাষ্ট্রদূত জানান, ‘‘ভারতের ওপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছে। যার কঠোরভাবে বিরোধিতা করছে চিন। যত চুপ করে থাকা হবে তত এদের মস্তানি আরও বে়ড়ে যাবে। চিন ভারতের পাশে আছে।’’ সামপ্রতিককালে ভারত-চিনের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে চিনের এই মন্তব্য ভারতের জন্য যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্যতম বড় দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংহতি ও সহযোগিতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভারত-চিনের এই বন্ধুত্বে গোটা এশিয়া মহাদেশের লাভ হবে। শুধু তাই নয় ভারত-চিনের এই বন্ধুত্ব আসলে পুরো বিশ্বের জন্যই লাভজনক। এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির ‘ডবল ইঞ্জিন’ আমরা।’’
ভারত-চিনের নতুন সমীকরণ
বেশ কয়েকবছর ধরেই লাদাখ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতায় দুই দেশই বুঝতে পারছে, দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা থাকলেও, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একে অপরকে সহযোগিতা করা ছাড়া বিকল্প নেই। যার কারণে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উত্তেজনা দমনের চেষ্টা করছে দুই দেশ। পাশাপাশি এশিয়ার অন্যতম বড় বাজার হল ভারত। বরাবরই চিন তার শিল্পপণ্য রপ্তানির জন্য ভারতকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবেই দেখে এসেছে। ভারতও চিনের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে থাকে। তাই উভয়ই আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এক নতুন এশীয় শক্তি-সমীকরণ গঠনের পথে হাঁটতে চাইছে।
আরও পড়ুন:- Earthquake: ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্ত, চিলিতে জারি সুনামি সতর্কতা
একই শুল্কবাণে জর্জরিত চিন
চিন বর্তমানে আমেরিকার প্রধান টার্গেট। ইলেকট্রনিক্স, ইভি গাড়ি, সোলার সেল—এসব খাতে বেইজিংকে চাপে রাখতে ওয়াশিংটন আগেই ব্যাপক হারে শুল্ক বসিয়েছে। ভারতের উপরও সেই একই ধরনের চাপ বাড়াতে চাইছে। চামড়াজাত দ্রব্য, ইস্পাত, টেক্সটাইলসহ নানা রপ্তানি পণ্যে উচ্চ শুল্ক চাপানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভারত ও চিন—দুই দেশই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে। এই অবস্থায় চীন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে আমেরিকার একতরফা দাদাগিরির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আর সেই ঐক্য গড়ে তুলতে ভারতের মতো একটি বড় আঞ্চলিক শক্তিকে পাশে রাখা তাদের কাছে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ শুধু বাণিজ্যের লড়াই নয়, বরং এক নতুন কূটনৈতিক টানাপোড়েনের সূচনা। তাই সীমান্ত ইস্যুতে যতই দ্বন্দ্ব থাকুক না কেন, বাস্তবতা বলছে— নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে ভারত ও চিনকে মার্কিন দাদাগিরির বিরুদ্ধে তাদের হাত মিলিয়েই এগোতে হবে।