বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানে (Pakistan) ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় টানা ভারী বর্ষণে নদীগুলির জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু পাঞ্জাব প্রদেশ থেকেই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিন্ধ প্রদেশেও প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৯০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ভয়াবহ বন্যা বিধ্বস্ত পাকিস্তান (Pakistan)
সতলজ, চেনাব এবং রাভি নদী ভয়াবহভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে। পাশাপাশি সিন্ধু নদী ও তার উপনদীগুলির জলস্তরও দ্রুত বেড়ে চলেছে। ফলে একের পর এক গ্রাম ডুবে যাচ্ছে, চাষের জমি ও ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে। পাকিস্তানের (Pakistan) প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন, ফলে এই বন্যা তাদের দুর্দশা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও অনেক পরিবার নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা করতে বিপদের মধ্যেই ঘরে থেকে যাচ্ছেন, যা প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন:-বাংলায় প্রথম বার, রাত পোহালেই রাজ্যে বিশেষ প্রিমিয়ার ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’এর! কোথায় কীভাবে দেখবেন?
পাকিস্তানের (Pakistan) এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দুর্গতদের উদ্ধারে জোরকদমে চলছে তৎপরতা। উদ্ধারকর্মীরা নৌকায় চেপে মানুষ ও পশুপাখিদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে প্রবল স্রোতের কারণে বিভিন্ন জায়গায় ছোট নৌকা উল্টে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবার সিন্ধু নদীতে বন্যাদুর্গতদের বহনকারী একটি নৌকা উল্টে গিয়ে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকদিন আগেও পাঞ্জাবের জালালপুর পীরওয়ালা শহরে একই ধরনের ঘটনায় ৫ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।
পাকিস্তানের (Pakistan) ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি জানিয়েছে, তারা পাঞ্জাবের বন্যাপীড়িত এলাকায় ইতিমধ্যেই কম্বল, তাঁবু ও জল ফিল্টারসহ বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও সহযোগিতা মিলছে। এই সপ্তাহেই জাতিসংঘ পাকিস্তানের বন্যা মোকাবিলায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৪১.৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে।
আরও পড়ুন:-মুহূর্তের মধ্যে টাকা পাঠানো যাবে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে! পোস্ট অফিসের নেটওয়ার্কের সঙ্গে জুড়ছে UPI
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তান (Pakistan) বন্যার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের গলতে থাকা হিমবাহ নতুন নতুন হ্রদ তৈরি করছে, যেগুলি ফেটে গিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে প্রায় ১,৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান (Pakistan) সরকার চলতি সপ্তাহে জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রশাসনকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৩০০ দিনের পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি খুব শিগগিরই দেশের চারটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকবেন, যাতে ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি রোধে কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা যায়।