বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের (Shehbaz Sharif) কণ্ঠে শোনা গেল ভারতের (India) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা। তিনি রবিবার ইসলামাবাদে এক সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার পথে হাঁটতে প্রস্তুত, তবে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রথমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান হওয়া জরুরি। তাঁর মতে, বহু দশক ধরে অমীমাংসিত এই কাশ্মীর ইস্যুই দুই দেশের সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই সমস্যা সমাধান না হলে যতবারই আলোচনার টেবিলে বসা হোক না কেন, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
ভারত-পাক সম্পর্কে উন্নতি নিয়ে বার্তা শরীফের (Shehbaz Sharif)
শরিফ (Shehbaz Sharif) বলেন, “আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তবে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সংস্কৃতি পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ খুলে যাবে। কিন্তু সেই স্বাভাবিক সম্পর্কের পথে প্রধান বাধা কাশ্মীর ইস্যু। কাশ্মীরি জনগণের অধিকার ও তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান না জানালে স্থায়ী সমাধান মিলবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, পাকিস্তান সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী, তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকতে হবে কাশ্মীর।
আরও পড়ুন:ভারত-পাক সহ ৭ টি যুদ্ধ থামিয়েছেন! বিরাট দাবি ট্রাম্পের, কয়টি নোবেল প্রাপ্য? দিলেন হিসেব
পাক প্রধানমন্ত্রীর (Shehbaz Sharif) এই মন্তব্য সে দেশের রাজনৈতিক মহলে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনই আন্তর্জাতিক মহলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ গত কয়েক বছর ধরে ভারত-পাক সম্পর্ক কার্যত বরফে ঢাকা পড়ে রয়েছে। বিশেষত ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সীমান্তে সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবাদ ও পাল্টা অভিযানের কারণে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এর মধ্যে পাকিস্তানের নতুন বার্তা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যদিও ভারতের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কাশ্মীরের প্রসঙ্গের পাশাপাশি গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগপ্রকাশ করেন শাহবাজ় শরিফ (Shehbaz Sharif)। তিনি বলেন, “গাজ়ায় যে রক্তপাত চলছে, তা শুধু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণও। শিশু, নারী, সাধারণ মানুষ—কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া।” তিনি আরও জানান, পাকিস্তান সব সময় ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন:ফের বিহার! এবার তেজস্বীর সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মা-কে গালিগালাজ, কড়া প্রতিক্রিয়া বিজেপির
শরিফের (Shehbaz Sharif) এই মন্তব্য পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে—একদিকে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত, অন্যদিকে গাজ়া নিয়ে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে তুলে ধরা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বার্তা দিলেই হবে না, বরং বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই একে অপরের উদ্বেগের জায়গাগুলি স্বীকার করতে হবে, তাহলেই হয়তো শান্তির আলো দেখা যেতে পারে।
শাহবাজ় শরিফের (Shehbaz Sharif) বার্তায় নতুন আশা জাগলেও, বাস্তবে দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ, বিশেষত কাশ্মীর প্রশ্ন, সমাধান কতটা সম্ভব হবে তা সময়ই বলবে। তবে অন্তত কূটনৈতিক স্তরে এই বক্তব্যকে ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবেই দেখছে আন্তর্জাতিক মহল।