বাংলাহান্ট ডেস্ক: দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) কেবল ভারতের নয়, আজ এক বৈশ্বিক উৎসবের নাম। ভারতের বাইরে বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসীরা এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যে সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করেন, তা সমানভাবে ভক্তি, আনন্দ এবং সামাজিক সংহতির প্রতীক। মহালয়ার চণ্ডীপাঠ, চক্ষুদান থেকে শুরু করে বিসর্জনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয় দুর্গাপুজোর অনন্য আবহ।
ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসের মাটিতে মায়ের আরাধনা (Durga Puja 2025)
বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2025) জৌলুস সমানভাবে চোখে পড়ার মতো। হিন্দু বাঙালির সংখ্যা অনুযায়ী এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়ে ওঠে প্রতিবছর। দেশজুড়ে প্রায় প্রতিটি জেলা ও শহরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিমার শোভা, মণ্ডপের সৌন্দর্য আর ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান বাংলাদেশে দুর্গাপুজোকে কেবল ধর্মীয় নয়, এক সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত করেছে। ভক্তরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন, আর মণ্ডপগুলো রূপ নেয় মিলনস্থলে।
আরও পড়ুন: নয়া নিম্নচাপে ফের ভারী বৃষ্টি শুরু! ষষ্ঠীতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির আবহাওয়া কেমন থাকবে? আপডেট জানুন
ভারতের প্রতিবেশী নেপালে এই উৎসব ‘দশাইন’ নামে পরিচিত (Durga Puja 2025)। দশদিনব্যাপী এই উৎসব নেপালের অন্যতম বৃহত্তম সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজন। রাজপরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই উৎসব আরও গুরুত্ব পায়। উৎসব চলাকালীন বিদ্যালয়, কলেজ, অফিস সহ বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, যাতে সবাই আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। পুজোর প্রতিটি দিন নানা রীতি-নীতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভরপুর থাকে।
অস্ট্রেলিয়াতেও দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2025) বিস্তার বিস্ময়কর। ১৯৭৪ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে মাত্র ১২টি পরিবার মিলে প্রথম পূজা শুরু করেছিলেন। আজ সিডনি থেকে মেলবোর্ন—অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি বড় শহরেই দুর্গাপুজো পালিত হয়। সিডনিতে ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উৎসাহ যেমন লক্ষ্যণীয়, তেমনই মেলবোর্নের কিসবরো এলাকায় স্থানীয় মানুষও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এতে করে দুর্গাপুজো হয়ে ওঠে একেবারে সমাজকেন্দ্রিক উৎসব।
ভারতের বাইরে ইউরোপে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) আজ অভিবাসী ভারতীয়দের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। লন্ডন-সহ বিভিন্ন শহরে নারীদের সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক সমিতিগুলি মিলিত হয়ে পূজার আয়োজন করে। প্রতিমা স্থাপন থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সবই হয় ঐতিহ্য রক্ষার উদ্দেশ্যে। এই সময় ভারতীয় প্রবাসীরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: রোদ দেখে ভুলবেন না! ষষ্ঠীতে ১৫ জেলায় বৃষ্টি, অষ্টমী-নবমী থেকে দুর্যোগ দক্ষিণবঙ্গে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ এটি ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ই এর প্রধান আয়োজক। নানা সমিতি একত্রে এই পাঁচদিনের উৎসব আয়োজন করে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং প্রবাসী জীবনে ভারতীয় ঐতিহ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও এই উৎসব বিশেষ ভূমিকা রাখে।
দুর্গাপুজো (Durga Puja 2025) তাই কেবল দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, এটি বিশ্বজুড়ে বাঙালি তথা ভারতীয় সম্প্রদায়ের পরিচয় ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে। সীমান্তের বাইরে থেকেও এই উৎসব মানুষকে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা আর ঐক্যের বার্তা দেয়। ফলে দুর্গাপুজো আজ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বহু প্রান্তে এক সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন হয়ে উঠেছে।